স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং নিরাপত্তা রক্ষায় বিশ্ব জুড়ে শৌচাগার ব্যবহারে সচেতনতার প্রচার শুরু প্রায় দু’দশক আগে। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, এখনও বিশ্বের ২৫০ কোটি মানুষ উন্মুক্ত শৌচাগার ব্যবহার করেন। গত ১৯ নভেম্বর বিশ্ব শৌচাগার দিবসে তাই এ বছরের ট্যাগ লাইন ছিল ‘উই কান্ট ওয়েট’। সচেতনতার সেই পথে কলকাতা এগোলো কতটা? শহর ঘুরলে ছবিটা এ রকম কোথাও খাল, ভেড়ি বা পুকুরের উপরে বাঁশের মাচা করে ছেঁড়া বস্তা ঘিরে ব্যবহার হচ্ছে অস্থায়ী শৌচাগার, কোথাও বা মাঠ, খালপাড় বা রাস্তার পাশেই শৌচকর্ম করেন মানুষ। যার জেরে মার খাচ্ছে পর্যটনশিল্প।
শহরের দর্শনীয় স্থানগুলিতে পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জানান দুর্গন্ধময় শৌচাগার নিয়ে। তাই পর্যটকেরা বেড়ানোর জায়গা বাছেন পরিচ্ছন্নতার নিরিখে। এমনই বক্তব্য একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার। সম্প্রতি সংস্থাটি দেশের সাতটি মেগাসিটির মধ্যে পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের সমীক্ষা চালিয়েছে। তালিকায় সবার নীচে রয়েছে কলকাতা।
চিকিৎসকেরা বলছেন, উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্মই ডায়েরিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েডের মূল কারণ। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, এই রোগগুলি বিষয়ে সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েতকে তথ্য সরবরাহ করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এর বেশি তথ্য থাকে না তাদের কাছে। রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রে খবর, উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর হলেও দফতরের তালিকায় নেই বিষয়টি।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দারের দাবি, শহরে ৩৩৩৪টি বস্তিতে প্রায় ৩ লক্ষ পরিবারের বাস। এ যাবৎ ১ লক্ষ ৩৪ হাজার শৌচাগার তৈরি হয়েছে। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বস্তিগুলি হওয়ায় বহু জায়গায় শৌচাগার তৈরিতে ৩/৪ ফুট জায়গাও মেলে না। তাই অর্ধেকের বেশি পরিবারকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে হয়। তিনি জানান, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ৪,৫০০টি শৌচাগার হবে। বস্তি দফতর এবং রাজ্য যৌথ ভাবে প্রায় এই খাতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করবে।
সমস্যা রয়েছে কম সুলভ শৌচালয় নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে শৌচাগারের সংখ্যা বাড়াতে বলেছিলেন। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে ৩৫০টি সুলভ শৌচালয় আছে। স্বপনবাবু জানান, বাইরে থেকে প্রতি দিন ১৬ থেকে ২০ লক্ষ লোক কলকাতায় আসেন। তাঁরাও যত্রতত্র শৌচকর্ম করায় দূষিত হয় পরিবেশ।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বস্তি এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু শৌচাগার হয়েছে। তবে অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করায় তপসিয়া, তিলজলা, কাশীপুর, গার্ডেনরিচের বস্তিগুলিও অনেক পিছিয়ে। ধাপায় কর্মরত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার পূরবী রায় জানান, দুর্গাপুর, খানাবেড়িয়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় শৌচকর্মের জন্য মহিলা ও শিশুরা যান মাঠ, খালপাড়ে। নতুন কমিউনিটি শৌচাগার তৈরি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক আধিকারিক জানান, এ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এলাকাভিত্তিক কিছু তথ্য রাখে। কোন বস্তিতে কত জনসংখ্যা, কতগুলি শৌচালয় সরকারি ও কতগুলি বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি, তার কোনও তথ্য পুরসভার কাছে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy