Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এন্টালির জো়ড়া গুলি-কাণ্ডে মূল অভিযুক্তেরা গ্রেফতার

এন্টালির জো়ড়া গুলি-কাণ্ডে এ বার মূল অভিযুক্ত কেলো-বাপি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার বামনগাছি থেকে মহম্মদ কেলো, মহম্মদ বাপি, শামিম আহমেদ ওরফে কাতলা শামিম এবং শাকিল আহমেদ ওরফে টিপুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ২০:০৩
Share: Save:

এন্টালির জো়ড়া গুলি-কাণ্ডে এ বার মূল অভিযুক্ত কেলো-বাপি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার বামনগাছি থেকে মহম্মদ কেলো, মহম্মদ বাপি, শামিম আহমেদ ওরফে কাতলা শামিম এবং শাকিল আহমেদ ওরফে টিপুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হল পুলিশ সূত্রের খবর।

কেন গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছিল এন্টালিতে?

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতলের প্রোমোটিং নিয়ে ওই দুই দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর লড়াই দীর্ঘ দিনের। এই দুই গোষ্ঠীর একদিকে রয়েছে কেলো-বাপির দলবল, অন্য দিকে রয়েছে নেটোর দলবল। এলাকায় প্রোমোটিং কার দখলে থাকবে, তা নিয়ে মাস কয়েক আগেও ওই এলাকায় গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছিল। তখনও এই অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়। এখন জামিনে মুক্ত রয়েছে তাঁরা।

ঘটনার দিন কি ঘটেছিল?

পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ জুন ভরদুপুরে দু’-দু’বার গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল এন্টালির বিবিরবাগান এবং মতিঝিল কলোনিতে। ওই দিন দুপুরে প্রথম গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটে এন্টালি থানা এলাকার বিবিরবাগানে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই দিন সকালেই একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে এসে বাসিন্দাদের হুমকি দেয় নিয়াজুর নামে এক দুষ্কৃতী। নিয়াজুর এলাকার দুষ্কৃতী কালো এবং বাপির গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের নিয়ে ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছিল বলে এলাকাবাসীদের দাবি। তাঁরা জানান, ওই নির্মীয়মান বহুতলে তাকে একটি ফ্ল্যাট পাইয়ে দিতে হবে বলে অনেক দিন ধরেই হুমকি দিচ্ছিল নিয়াজুর। কিন্তু ওই বহুতলের প্রমোটার নিয়াজুরকে ফ্ল্যাট দিতে রাজি হলেও তা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অন্য কয়েক জনকে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে হুমকি দিয়ে চলে যাওয়ার পর ফের দুপুরে নিয়াজুর বাহিনী ফিরে আসে। তখনই চলে গুলি ও বোমাবাজি। নির্মীয়মাণ বহুতলের পাশে দাড়িয়ে থাকা শেখ আসলামের পায়ে গুলি লাগে। এর পরেই এলাকাবাসী ওই দুষ্কৃতীদের তাড়া করলে বাইক ফেলে চম্পট দেয় তারা। এলাকাবাসী ওই বাইকটি জ্বালিয়ে দেন।

আরও পড়ুন: ঠাকুরমাকে খুনের পিছনে নাতির ‘উচ্ছৃঙ্খল’ জীবন

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে এন্টালির মতিঝিলে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই এর পাল্টা হিসাবে এলাকার আরেক দুষ্কৃতী নেটোর বাহিনী হামলা চালায়। মতিঝিলের কাছে দুর্গাপুর মাঠে কেলো-বাপির দলবলকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায় নেটোর দলবল। তাতে সামেদ আলি নামে আরও এক জন জখম হন। পাল্টা বোমাবাজিও করে কেলো-বাপির দলবল। আর তাতেই গুলিবিদ্ধ হন সামাদ আলি কালো বাপির ঘনিষ্ঠ এক যুবক। তার হাতে গুলি লাগে।

ঘটনার পর পরই এন্টালি থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা। বিধায়কের অভিযোগের পরেও মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি থানা। ঘটনার দিন রাতেই সুখেন নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্তেরা ছিল অধরাই।

পুলিশ সূত্রের খবর, ১৯ জুন নির্দিষ্ট খবর পেয়েও একটুর জন্য হাত থেকে ফস্কে যায় এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কেলো-বাপি-সহ চার অভিযুক্ত। পুলিশ খবর পেয়েছিল, ভোজেরহাটের কাছে এক জায়গায় মূল অভিযুক্ত কেলো, বাপি-সহ চার জন লুকিয়ে আছে। কিন্তু হানা দিয়ে গোয়েন্দারা দেখেন, কেলো ও বাপি উধাও। রয়েছে তাদের দুই শাগরেদ অর্জুন সিংহ ও শেখ নিয়াজু। যদিও কি ভাবে দুষ্কৃতীরা তাঁদের অভিযানের খবর পেয়ে গেল, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন গোয়েন্দারা। ওই দু’জনকেই ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ অবশ্য সরকারি ভাবে জানিয়েছিল, বর্ধমান স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে শেখ নিয়াজুকে পাকড়াও করা হয়েছে। এর পর শেখ নিয়াজুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যান্য অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি চালাতে শুরু করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদে শেখ নিয়াজু পুলিশকে বিভ্রান্ত করলেও পরে জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সে। সে জানায়, দত্তপুকুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে থাকার বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছিল। সেই মতো ঘটনার পর শিয়ালদহ স্টেশন গিয়ে ট্রেন ধরে তাঁরা ওই এলাকায় পাড়ি দেয়। কিন্তু দত্তপুকুরের কোথায় তাঁরা লুকিয়ে রয়েছে, তার কিছুতেই হদিশ পাচ্ছিল না পুলিশ। তাঁদের মোবাইলও ছিল সুইচড অফ। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই ওই অভিযুক্তদের সন্ধান পায় পুলিশ। সেই মতো এন্টালি থানা থেকে পুলিশের একটি দল রবিবার রাতে দত্তপুকুর এলাকার বামনগাছি গিয়ে শামিমের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে চার অভিযুক্তকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Firing Arrest Accused Entally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE