Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ডলার ‘পাচার’, বিমান সংস্থার কর্মী গ্রেফতার

শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জন গ্রাউন্ড স্টাফের কাজকর্ম প্রধানত বিমানবন্দরের চেক-ইন এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। তিনি কেন নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢুকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ হয় অফিসারদের। এক শুল্ক কর্তার কথায়, ‘‘বিমানবন্দরের কর্মীদের একাংশের উপরে আমাদের নজর ছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

বিমানে করে সোনা পাচারের সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরের কর্মীদের একাংশও জড়িত বলে দীর্ঘ দিনের সন্দেহ ছিল শুল্ক দফতরের। প্রধানত ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানের আসন থেকে লুকোনো সোনা পাওয়ার পরে শুল্ক অফিসারেরা অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরেরই কোনও কর্মীর সেই সোনা পরে বাইরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল। বছর দুয়েক আগে এ ভাবে সোনা পাচার করতে গিয়ে বেসরকারি বিমানসংস্থার এক কর্মী ধরাও পড়েছিলেন। এ বার ডলার পাচার করার অভিযোগে আরও এক বিমানসংস্থার কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে শুল্ক দফতর।

শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডলার পাচার করতে গিয়ে যে কর্মী ধরা পড়েছেন, তিনি এয়ার ইন্ডিয়া এয়ার ট্র্যাফিক সার্ভিস লিমিটেডের আউটসোর্স করা কর্মী। সম্প্রতি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক যাচ্ছিলেন হাওড়ার এক ব্যবসায়ী। প্রাথমিক তদন্তে শুল্ক অফিসারেরা জানতে পারেন, বিমানবন্দরে ঢুকে ওই ব্যবসায়ী তাঁর পূর্ব পরিচিত ওই কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। যাত্রীর কাছ থেকে ২৮ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে নেন ওই কর্মী। নিজের মানিব্যাগে এবং জুতোর মধ্যে লুকিয়ে ওই ডলার নিয়ে তিনি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢুকছিলেন। সেই সময়ে তিনি ধরা পড়ে যান শুল্ক অফিসারদের হাতে।

শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জন গ্রাউন্ড স্টাফের কাজকর্ম প্রধানত বিমানবন্দরের চেক-ইন এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। তিনি কেন নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢুকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ হয় অফিসারদের। এক শুল্ক কর্তার কথায়, ‘‘বিমানবন্দরের কর্মীদের একাংশের উপরে আমাদের নজর ছিল। এই কর্মীকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢুকতে দেখে সন্দেহ জোরদার হয়।’’ তাঁকে তল্লাশি করতেই বেরিয়ে পড়ে প্রায় ১৭ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ওই ডলার।

জেরা করে জানা যায়, ওই ডলার নিয়ে ওই কর্মী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢোকার পরে অপেক্ষা করতেন ওই যাত্রীর জন্য। সেই যাত্রী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে এলে তাঁর হাতে ডলার তুলে দেওয়ার কথা ছিল ওই কর্মীর। সন্দেহ, এর জন্য ‘পারিশ্রমিক’ পাওয়ারও কথা ছিল ওই কর্মীর। এই কর্মীকে জেরা করেই পরে ব্যাঙ্ককগামী ওই যাত্রীর হদিস পায় শুল্ক দফতর। তাঁর কাছ থেকেও ১ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

শুল্ক অফিসারেরা জানিয়েছেন, এই টাকাও যাত্রীর কাছে থাকার কথা নয়। থাকলে তার সমর্থনে কাগজপত্রও রাখার কথা। তা হাওড়া নিবাসী সেই যাত্রীর কাছে পাওয়া যায়নি। তবে দু’জনের কাছ থেকেই যেহেতু ২০ লক্ষ টাকার কম মূল্যের ডলার মিলেছে, তাই স্বাভাবিক নিয়মে তাঁদের গ্রেফতার না করে ডলার বাজেয়াপ্ত করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এয়ার ইন্ডিয়া এয়ার ট্র্যাফিক সার্ভিস লিমিটেডের ওই কর্মীরকে রবিবারই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। মঙ্গলবার তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুল্ক অফিসারদের কথায়, নিজের পরিচয়পত্রের জন্যই সহজে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যেতে পেরেছিলেন বিমানসংস্থার ওই কর্মী। এ ক্ষেত্রে সেই পরিচয়পত্রের ‘সুবিধা’ পাচারের কাজে লাগানোর অভিযোগে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন শুল্ক কর্তারা।

নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢোকার মুখে যাত্রীকে যেমন তল্লাশি করা হয়, তেমনই বিমানবন্দরের কোনও কর্মী ঢুকলে তাঁকেও পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু শুল্ক দফতরের দাবি, বিমানবন্দরের কর্মরত পরিচিত মুখ কোনও কর্মী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢুকলে সেই তল্লাশি একেবারেই ‘নাম কা ওয়াস্তে’ হয়। ও ভাবে জুতোর ভিতরে কিছু লুকিয়ে নিয়ে গেলে নিরাপত্তা কর্মীদের পক্ষে জুতো খুলে তল্লাশি করাও সম্ভব নয়, যদি না আগে থেকে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Airline staff
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE