সৌন্দর্য তো মাথায় উঠেছিল আগেই। সেই সঙ্গে ভাঙা কাচ বদলানোর ক্ষেত্রে কোথাও একটা গড়িমসিও ছিল। শেষ পর্যন্ত একটি তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে টনক নড়ল বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের।
কলকাতা বিমানবন্দরের মেঝে গলে একতলা থেকে বেসমেন্টে পড়ে গিয়ে গোরাচরণ সিংহ নামে এক সিআইএসএফ জওয়ানের মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার। সেই অপমৃত্যুর পরে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ শুক্রবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, টার্মিনালের মেঝেতে যে-সব জায়গায় কাচ রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে কংক্রিট করে দেওয়া হবে। নতুন অধিকর্তা অনিল শর্মা কলকাতা বিমানবন্দরের দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র মাস দেড়েক আগে। তিনি এ দিন জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বদলে ফেলা হবে টার্মিনালের মেঝের কাচ।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রায় দেড় বছর ধরে টার্মিনালের ৪০টি কাচ ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন আগে স্ল্যাবের কাচ ভাঙা সত্ত্বেও সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। জোড়াতালির মতো তার উপরে শুধু ফাইবারের চাদর ফেলা রাখা হয়েছে। এটা কার গাফিলতি? যাঁর আমলে ওই টার্মিনাল তৈরি হয়, বিমানবন্দরের সেই পূর্বতন অধিকর্তা বি পি শর্মার দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে সংস্থার বিভিন্ন অংশ থেকে। কী বক্তব্য প্রাক্তন অধিকর্তার? এ দিন চেষ্টা করেও শর্মার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
অনিল বলেন, ‘‘নতুন টার্মিনাল এমন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে মেঝেতে কাচ লাগালে প্রথমত দেখতে সুন্দর হবে। দ্বিতীয়ত, সেখান থেকে আলো গিয়ে পৌঁছবে বেসমেন্টে। সেখানে বিমান সংস্থার অফিস রয়েছে।’’ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরে সৌন্দর্য শিকেয় তুলে মেঝের সব কাচ খুলে সেখানে কংক্রিট ঢালাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন টার্মিনালের কাচ কেন মাঝেমধ্যেই ভেঙে পড়ে, তার সদুত্তর নেই।
নতুন টার্মিনালে ঢোকার মুখে পরপর দু’টি দেওয়াল। মাঝখানে প্রায় সাত ফুট ফাঁক। সেই ফাঁক বরাবর লম্বা করিডর। সাফাইকর্মীরা রোজ সেখানে যান। কখনও কখনও নিরাপত্তার খাতিরে সেখানে যেতে হয় সিআইএসএফ-কেও। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফেরার আগে ওই এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন গোরাচরণ এবং তাঁর সহকর্মীরা। ওই এলাকার মেঝেতেই কংক্রিটের স্ল্যাবের মধ্যে মধ্যে কাচ বসানো।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাচ ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকলেও তা সারানো হয়নি বলে অভিযোগ। সেই এলাকা যে বিপজ্জনক, সেই বিষয়ে কোনও সতর্কীকরণ চিহ্নও দেওয়া হয়নি। দু’পাশে মেরেকেটে আট ইঞ্চি চওড়া কংক্রিটের অংশ। ওই অংশ দিয়ে যাত্রী বা বিমান সংস্থার কর্মীরা যাতায়াত না-করলেও রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত কর্মীদের প্রতিদিন যেতে হয় সেখানে। তাঁরা কোনও ভাবে শরীরের ভারসাম্য রেখে ওই আট ইঞ্চি চওড়া অংশ দিয়ে ফাইবারে ঢাকা এলাকা পেরিয়ে যান। বৃহস্পতিবার ওই অংশ পেরোনোর সময় টাল সামলাতে না-পেরে ফাইবারের উপরে পা পড়ে যায় গোরাচরণের। ফাইবারসুদ্ধ বেসমেন্টে পড়ে যান তিনি। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সিআইএসএফ কর্মীদের কথায়, ‘‘অনেক সময় ভাঙা কাচের উপরে ফাইবার লাগানো থাকলেও তা দেখে কাচই মনে হয়। কোথাও তো কোনও সতর্কীকরণ চিহ্ন নেই।’’
শুক্রবারেও বিমানবন্দরে ১৭ নম্বর অ্যারোব্রিজের দেওয়ালের কাচ ভেঙে যায়। বৃহস্পতিবার সিআইএসএফ জওয়ানের দুর্ঘটনার পরে সন্ধ্যায় ওই এলাকার দেওয়াল থেকেও খসে পড়েছে একটি কাচ। এ ভাবে প্রায় নিয়মিতই কাচ ভাঙছে। ভাঙা কাচের টুকরো উপর থেকে মাথায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবু এত দিন টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।
গোরাচরণের মৃত্যুর পরে এ দিন অবশ্য সেই করিডরের ঢোকা-বেরোনোর জায়গায় সাদা কাগজে লিখে সতর্কবার্তা লটকে দেওয়া হয়েছে। ময়না-তদন্তের পরে ওই জওয়ানের দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর ভাইয়ের হাতে। রাতেই গাড়িতে মরদেহ নিয়ে ময়ূরভঞ্জ রওনা হয়ে গিয়েছেন তাঁর আত্মীয়েরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy