Advertisement
০৭ মে ২০২৪

সিপিএমের রক্ত চলবে না, ক্যাম্প থামিয়ে দিলেন নির্মল

তিনি সব পারেন। তা সে মানুষের হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর চেষ্টা হোক, কিংবা ছেলের মেডিক্যাল পরীক্ষায় সিসিটিভি বন্ধ রাখার আর্জি পেশ। মেডিক্যালে টোকাটুকিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেও কসুর করেন না। সেই তিনিই বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার পরে আহতদের রক্ত জোগানোর ক্যাম্পও বন্ধ করে দিলেন, আপন প্রতিপত্তির জোরে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

তিনি সব পারেন। তা সে মানুষের হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর চেষ্টা হোক, কিংবা ছেলের মেডিক্যাল পরীক্ষায় সিসিটিভি বন্ধ রাখার আর্জি পেশ। মেডিক্যালে টোকাটুকিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেও কসুর করেন না। সেই তিনিই বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার পরে আহতদের রক্ত জোগানোর ক্যাম্পও বন্ধ করে দিলেন, আপন প্রতিপত্তির জোরে!

তিনি নির্মল মাজি। শাসকদলের প্রবল পরাক্রমী চিকিৎসক-বিধায়ক। ইদানীং নানা ‘কীর্তির’ দৌলতে যিনি বারবার শিরোনাম হয়েছেন। এবং অতীতে যেমন তাঁর কোনও শাস্তি হয়নি, তেমন এ দিনও নির্মলের ‘রক্ত-রাজনীতি’র পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ‘‘রক্ত নিয়ে নোংরা রাজনীতি হচ্ছে। সেটা করতে বারণ করব। আমাদের যথেষ্ট রক্ত আছে। রক্ত দেওয়ার হুজ্জুতি করার প্রয়োজন নেই। রক্তের প্রয়োজন থাকলে সবাই আছেন। আমি বললে এক লক্ষ লোক রক্ত দেবে।’’

অথচ বাস্তব উল্টো বলছে। একে গরম, তার উপরে আসন্ন ভোটের জেরে রাজ্যে এখন রক্তের বেশ আকাল। এ দিন মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটি ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বাইরে বহু আহতের পরিজনকে দেখা গিয়েছে আকুল হয়ে রক্ত চাইতে। রক্তদানের আবেদনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ছয়লাপ। তা-ও মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন কী ভাবে বললেন?

ঠিক কী হয়েছে এ দিন?

সেতু-বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এ দিন মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান শিবির বসিয়েছিল বামপন্থী একাধিক ছাত্র-যুব সংগঠন। বিকেল থেকে দলে দলে রক্তদাতা আসেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রক্ত নেওয়া শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাদে হাজির হন নির্মল। বামপন্থীদের উদ্যোগে শিবির চালানোর অনুমতি কেন দেওয়া হল, কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি কৈফিয়ত তলব করেন। পত্রপাঠ ক্যাম্প বন্ধের হুকুমও জারি করেন। ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘোষণা করে, আর রক্ত নেওয়া যাবে না।

শুনে রক্তদাতারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সুজন চক্রবর্তী, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সিপিএমের কিছু নেতা চলে আসেন। তাঁদের অভিযোগ, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তার কাছে তাঁরা ব্যাখ্যা চাইলেও স্পষ্ট জবাব মেলেনি। সাংসদ ঋতব্রত বলেন, ‘‘কলকাতা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে অনেকে রক্ত দিতে এসেছিলেন। আচমকা নির্মল মাজি হাজির হন। তার পরেই জানানো হয়, রক্ত নেওয়া যাবে না।’’ যাবতীয় কলকাঠি নির্মলবাবুই নেড়েছেন বলে ঋতব্রতের অভিযোগ। ‘‘১১০ জন রক্ত দিয়েছেন। প্রায় আড়াইশো জন ফিরে গিয়েছেন। এ দিকে যা পরিস্থিতি, তাতে রাতভর ক্যাম্প চললে ভাল হতো।’’— আক্ষেপ তাঁর।

সন্ধ্যায় পুলিশ আসে। রাত পর্যন্ত তারা ব্লাড ব্যাঙ্কের দরজা আগলে ছিল। ক্যাম্প বন্ধ হল কেন?

‘‘আমি কাউকে কিছু বন্ধ করতে বলিনি।’’— দাবি নির্মলবাবুর। যদিও সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘সিপিএম রাস্তা থেকে লোক ধরে এনে রক্ত দেওয়ানোর চেষ্টা করছিল। এ অর্থহীন। কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ঘাটতি নেই। আর রক্তের প্রয়োজনও নেই।’’ নির্মলবাবুর দাবি, এটাই তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান। কর্তৃপক্ষ যা করেছেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরও যুক্তি, ‘‘রক্তের অভাব নেই। রক্ত নিয়ে রাখার জায়গাও তো করতে হয়। যাঁরা নাম লিখিয়েছেন, দরকারে তাঁদের ডাকা হবে।’’

সত্যিই কি রক্তের জোগান পর্যাপ্ত?

সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের একাধিক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের ভাঁড়ারে তো বটেই, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কেও ঘোর সঙ্কট। বহু লোক রক্ত পাচ্ছেন না। ‘‘এই অবস্থায় স্বেচ্ছা রক্তদানের ক্যাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধু অযৌক্তিক নয়, অনৈতিক।’’— মন্তব্য এক কর্তার।

এ দিন রাত পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজে ও আরজিকরে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের টানাটানি ছিল। অনেকে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে ছুটেছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও রক্ত চেয়ে আবেদন পড়েছে।

দীপঙ্কর মিত্র, অপূর্ব ঘোষের মতো রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরাও স্তম্ভিত। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের তথ্যানুযায়ী, এ দিনের শেষে সেখানে ৭২৩ ইউনিট ‘হোল ব্লাড’ মজুত রয়েছে। রক্তদান-কর্মীদের দাবি, এই সময়ে মজুতের পরিমাণটা হওয়া উচিত অন্তত আড়াই হাজার ইউনিট। ‘‘কোন যুক্তিতে দাতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হল, বুঝতে পারছি না।’’— বলছেন ওঁরা। ওঁদের মন্তব্য, ‘‘রক্ত বেশি পেলে ক্ষতি নেই! সংরক্ষণ করে পরে কাজে লাগানোই যায়।’’

সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা কুমারেশ হালদার ঘটনার পরেই নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।

ফলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

আরও পড়ুন:
‘মেয়র মেডিক্যালে যাও, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE