Advertisement
১১ মে ২০২৪

শখের আলোয় শহর জুড়ে ‘শক’-এর শঙ্কা

গোটা শহর আলোয় সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে কলকাতা ও বিধাননগর পুরবোর্ড। কিন্তু তাতে যে বিপদের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, এত দিন তা খেয়ালই করেননি পুরকর্তারা। এখন যাতায়াতের পথে তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ কলকাতা পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদের।

কালীঘাট- ছুঁয়ে ফেললেই বিপদ। বাতিস্তম্ভে বিদ্যুতের বাক্স থেকে এ ভাবেই তার টেনে এলইডি আলোর সংযোগ দেওয়া হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র

কালীঘাট- ছুঁয়ে ফেললেই বিপদ। বাতিস্তম্ভে বিদ্যুতের বাক্স থেকে এ ভাবেই তার টেনে এলইডি আলোর সংযোগ দেওয়া হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

গোটা শহর আলোয় সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে কলকাতা ও বিধাননগর পুরবোর্ড। কিন্তু তাতে যে বিপদের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, এত দিন তা খেয়ালই করেননি পুরকর্তারা। এখন যাতায়াতের পথে তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ কলকাতা পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদের।

কলকাতা এবং বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় বাতিস্তম্ভের মাঝখানে বার করা তার থেকে সংযোগ করে জ্বালানো হচ্ছে এলইডি আলো। আকর্ষণীয় ওই আলোয় হাত পড়লেই বিপদ। ‘শক’ খেতে পারেন যে কেউ।

এক মেয়র পারিষদের কথায়, ‘‘এ তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যে ভাবে তার বেরিয়ে রয়েছে, তাতে বাতিস্তম্ভে কারও হাত লাগলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’ ‘দিদিমণি’ অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে পড়ার আগেই তা দ্রুত ঠিক করা দরকার বলে জানান ওই মেয়র পারিষদ।

কলকাতা পুরসভায় ত্রিফলা আলো বসানো নিয়ে কেলেঙ্কারি নজর কেড়েছিল গোটা রাজ্যের। এ বার সেই বাতিস্তম্ভের উপরে এলইডি আলোর তার জড়ানো নিয়ে আর এক দফা বিড়ম্বনার মুখে পুরবোর্ড। এ বার অবশ্য তাদের দোসর বিধাননগর পুরবোর্ডও। কলকাতায় যে কয়েকটি রাস্তায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের উপরে এলইডি আলোর তার জড়ানো হয়েছে, তার অন্যতম হল ডি এল খান রোড, হরিশ মুখার্জি রোড এবং পার্ক স্ট্রিট। কলকাতা পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘সৌন্দর্যায়নের কাজ এত দ্রুত করতে হয়, অনেক সময়ে পরিকল্পনা মাফিক হয়ে ওঠে না। ত্রিফলায় সেই ভুলই হয়েছিল। এ বারও তা-ই হয়েছে।’’

সল্টলেক

রবিবার রাতে বিধাননগরে সেন্ট্রাল পার্ক সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের মাঝখানে বিদ্যুত সংযোগের যে বক্স রয়েছে, তা খোলা। ওই বাতিস্তম্ভ জড়িয়ে যে এলইডি আলো ঝোলানো হয়েছে, তা সংযোগ করা হয়েছে বক্স থেকে বেরোনো তার থেকে। একে লোহার পোল, তার উপরে খোলা অবস্থায় বিদ্যুতের তার। বিধাননগর পুরনিগমের এক অফিসারের কথায়, ‘‘কী আর করব বলুন? সবেতেই দ্রুত করার নির্দেশ। তা পালন করতে গিয়েই এমনটা হয়েছে।’’

কলকাতা পুরসভা অবশ্য আগেই এই কাজ শুরু করেছে। বড়দিন পালনের জন্য পার্ক স্ট্রিট আলো দিয়ে সাজিয়েছিল রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতর। কাজটা করেছিল কলকাতা পুরসভা। বিধাননগরের মতো কলকাতা পুরসভার এক অফিসারের কথায়, ‘‘এত দ্রুত কাজটা করতে হয়েছিল যে, এ ভাবেই সংযোগ নিতে বাধ্য হন কর্মীরা।’’ এখন অবশ্য তাঁদের হুঁশ হয়েছে, তাই বলছেন, ‘‘এই কাজটা আদৌ ঠিক হয়নি।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, এক-একটি এলইডি লাগাতে পুরসভার খরচ হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ওই সব এলইডি জল নিরোধক, যাতে বর্ষার সময়ে ভিজে নষ্ট না হয়। ইতিমধ্যেই পুরসভা প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কলকাতার দু’হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে এলইডি লাগানোর জন্য। সারা শহরে প্রায় ২০ হাজার বাতিস্তম্ভ রয়েছে। এক আমলার কথায়, ‘‘পরমা উড়ালপুলে নীল-সাদা এলইডি আলোয় বাতিস্তম্ভ সাজানোর পরেই শহর জুড়ে তা করার পরিকল্পনা করা হয়। এতে শুধু নীল-সাদা নয়, আরও বাহারি আলো ব্যবহার হয়েছে।’’

তবে কাজটা যে এ রকম ঝুঁকির হয়ে যাবে, তা বোঝেননি পুরকর্তারা। কলকাতা পুরসভার আলো দফতরের মেয়র পারিষদ মনজার ইকবাল তা স্বীকার করে বলেন, ‘‘নতুন করে আর কোথাও এ ভাবে এলইডি লাগানো হবে না। যেখানে লাগানো হয়েছে, তা ঠিক করতে বলা হয়েছে।’’ তিনি জানান, কী ভাবে তা ব্যবহার করা হবে, ইঞ্জিনিয়ারদের দেখতে বলা হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, ত্রিফলা থেকে বাতি চুরির প্রবণতা ছিলই। তার উপরে এলইডি লাগানোয় চুরি বাড়ছে। চুরি কমাতে পুলিশকেও তৎপর করা জরুরি বলে মনে করেন পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE