Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কমিটি গড়লেই আগুন রোখা যায় না: সুব্রত

শহরের অগ্নি-সুরক্ষায় কোনও কমিটির সুপারিশই যে ঠিকমতো কার্যকর হয়নি, তা প্রমাণিত। মঙ্গলবার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ডের পরে এ বার এই ভাবে কমিটি গড়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, “কমিটি গড়ে কিছু হবে না। আমার আমলেও হয়নি। এখনও হবে না।”

প্রাক্তন মেয়র ও বর্তমান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়

প্রাক্তন মেয়র ও বর্তমান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১০
Share: Save:

শহরের অগ্নি-সুরক্ষায় কোনও কমিটির সুপারিশই যে ঠিকমতো কার্যকর হয়নি, তা প্রমাণিত। মঙ্গলবার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ডের পরে এ বার এই ভাবে কমিটি গড়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, “কমিটি গড়ে কিছু হবে না। আমার আমলেও হয়নি। এখনও হবে না।”

স্টিফেন কোর্ট-কাণ্ডের পরে শহরে অগ্নিবিধি কার্যকর করতে এমনই একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। পুর-প্রশাসনকে ৪২টি বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা দিয়ে কমিটি তাদের রিপোর্টে সুপারিশ করে অগ্নিবিধি না মানলে ওই বাড়িগুলিতে ব্যবসার ছাড়পত্র আটকে রাখা হোক। মাস কয়েক আগে মানবিকতার দোহাই দিয়ে সেই রিপোর্টকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়েই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় তাদের ছাড়পত্র দিয়েছেন। মঙ্গলবারও সগর্বে সে প্রসঙ্গ তুলে শোভনবাবু বলেছেন, “ওঁদেরও লোকসান হচ্ছিল। পুরসভার আয় কমছিল। তাই শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়েছে।” এর প্রেক্ষিতেই পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবুর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।

সুব্রতবাবুর দাবি, গত কয়েক বছর ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখেশুনেই কমিটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি। সে কথা এ দিন অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেন, “প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে নাম-কা-ওয়াস্তে একটা কমিটি হয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। অগ্নিবিধি মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। শেষে কমিটি রিপোর্ট দেয়, শট শার্কিট থেকে আগুন লেগেছে।” গত কুড়ি বছর ধরে এমনটাই তিনি বারবার দেখে আসছেন বলে জানান সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “লিখে নিন সুব্রত মুখার্জির আগাম রিপোর্ট। চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।” অর্থাৎ এ বারও সেই শট শার্কিট তত্ত্বই জানানো হবে।

তাঁর দলের প্রাক্তন মেয়রের বক্তব্য শুনে বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “উনি কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন জানি না। তবে কমিটি গঠনে সরকারের প্রতিনিধিও ছিলেন।”

এই বিতর্কের পাশাপাশি শোভনবাবুর বলা ‘শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স নবীকরণ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দমকলও। দফতরের এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “১৯৫০ সালে তৈরি ফায়ার অ্যাক্ট-এর অ্যামেন্ডমেন্ট অনুসারে প্রভিশনাল ক্লিয়ারেন্স (প্রভিশনাল নো অবজেকশন) বলে কিছু হয় না। দমকলের নো-অবজেকশন না পেলে কোনও মতেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়া উচিত নয়।” আইনের ওই কথা জেনেও পুরকর্তাদের নিয়ম ভেঙেই তা করতে হচ্ছে বলে জানান ওই অফিসার। এ নিয়ে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কিছু বলতে চাননি।

এর প্রেক্ষিতে আপত্তি তুলেছেন বাম আমলের মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টার্চাযও। তাঁর বক্তব্য, “স্টিফেন কোর্টের ঘটনা আমাদের আমলে হয়েছিল। কমিটির রিপোর্ট পেয়েই ৪২টি বিল্ডিংয়ের লাইসেন্স নবীকরণ বন্ধ করা হয়েছিল। অগ্নিবিধি পুরোপুরি না মেনেই তৃণমূল বোর্ডের আমলে তারা ছাড় পেয়ে গেল।” সুব্রতবাবুর বক্তব্যের রেশ ধরে তিনিও বলেন, “একটি কমিটির রিপোর্ট না মেনে আর একটা কমিটি তৈরির অর্থই হয় না। আসলে ওঁরা অগ্নি সুরক্ষার মতো বিষয়েও পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছেন।”

শহরে তিনি রাজা, অসীম প্রতাপ। মঙ্গলবার, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

শোভনবাবু পাল্টা বলেন, “৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো কলকাতা শহরের যা কাঠামো, তাতে আইন দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না।” তিনি জানান, অগ্নি-নিরাপত্তায় বহুতলগুলির উপরে জলের ব্যবস্থা করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছু বাড়ির যা হাল, (স্ট্রাকচারাল) তাতে নতুন জলাধার তৈরির জায়গা নেই। তা সত্ত্বেও পুরসভা কয়েকটা জায়গায় গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করেছে। যতটা সম্ভব অগ্নিবিধি মেনে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে অনেক বহুতলই। সেই ভিত্তিতেই শর্তসাপেক্ষে ব্যবসার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, “ওঁদের তো তিন বছর লাইসেন্স নবীকরণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ বার ছাড়া হয়েছে। এত লোকের রুটিরুজি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করি।”

তবে বহুতলে অগ্নিবিধি মানার ক্ষেত্রে দমকল দফতর আরও কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে জানান দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। তিনি বলেন, “দমকল দফতরের নো-অবজেকশন ছাড়া কোনও ব্যবসা করা যাবে না। প্রতি তিন মাস অন্তর ‘মক ড্রিলিং’ হবে বহুতলে। স্থানীয় এলাকার দমকল দফতর ওই সব বহুতলে গিয়ে অগ্নি-নিরাপত্তার সরঞ্জাম চালিয়ে দেখবে। তবেই মিলবে দমকলের ছাড়পত্র।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE