Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গায়ে বর্ষাতি হাতে বন্দুক দোকানে লুঠ

পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ পাঁচ দুষ্কৃতী হানা দেয় গড়িয়াহাট রোডের ওই সোনার দোকানে। চার জন ভিতরে ঢোকে। এক জন বাইরে থাকে পাহারায়।

তদন্ত: ডাকাতির পরে দোকানে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত: ডাকাতির পরে দোকানে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

দিনেদুপুরে ডাকাতি যোধপুর পার্কের একটি সোনার দোকানে!

গড়িয়াহাট রোডের ওই দোকানে বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে পাঁচ সশস্ত্র দুষ্কৃতী যে ভাবে সব কিছু লুঠ করে নিয়ে গেল, তাতে শহরের নিরাপত্তা নিয়েই ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

এ দিনের ওই ঘটনায় এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যেই যাদবপুর থানার মোড়। সেখানে একাধিক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট-সহ পুলিশকর্মীরা থাকেন। যোধপুর পার্ক, ঢাকুরিয়া মোড়েও পুলিশ থাকে। এ সবের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা কী ভাবে গড়িয়াহাট রোডের উপরে থাকা ওই দোকানে হানা দেওয়ার সাহস পেল, তা ভেবে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।

পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ পাঁচ দুষ্কৃতী হানা দেয় গড়িয়াহাট রোডের ওই সোনার দোকানে। চার জন ভিতরে ঢোকে। এক জন বাইরে থাকে পাহারায়। কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, ওই সময়ে বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। চার যুবকের পরনেই ছিল কালো বর্ষাতি। নাক আর মুখ ঢাকা ছিল মুখোশে। দোকানের মালিক সেই সময়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। অন্য কয়েক জন কর্মীও বেরিয়েছিলেন টিফিন সারতে। সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীও তখনই টিফিন সেরে ঢুকেছিলেন দোকানে।

ওই সময়টিকেই দুষ্কৃতীরা ডাকাতির জন্য বেছে নিয়েছিল বলে জানাচ্ছে পুলিশ। ঘটনার সময়ে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া দোকানে ছিলেন তিন জন কর্মী। এ দিন লালবাজারে ডেকে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশকে তাঁরা জানান, দোকানে ঢুকে রক্ষীর মাথায় বন্দুক চেপে ধরে এক দুষ্কৃতী। আর এক জন তার মাথায় বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। এর পরেই দোকানের ভিতরে ঢুকে বাকি দু’জন ব্যাগ থেকে বন্দুক বার করে।

আরও পড়ুন: রাজ্য ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু টেক মহীন্দ্রার

পুলিশ জানায়, চার দুষ্কৃতীর এক জন কর্মীদের বন্দুক দেখিয়ে দোকানের এক দিকে নিয়ে যায়। বাকিরা গয়নাগাঁটি ব্যাগে ভরতে থাকে। ক্যাশ থেকে টাকাও নিয়ে যায় তারা। দশ- পনেরো মিনিটের মধ্যে ‘অপারেশন’ শেষ করে চলে যায় চার জন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, দিন দুয়েক হল ওই দোকানের সিসিটিভি খারাপ। সেই খবরটা বাইরে কোনও ভাবে বেরিয়ে গিয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে দোকানের মালিক দাবি করেছেন, একটি সিসিটিভি সক্রিয় ছিল। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, তাদের হাতে কোনও সিসিটিভি-র ছবি আসেনি। পুলিশের বক্তব্য, পরিকল্পনা করেই দুষ্কৃতীরা দোকানে হানা দিয়েছিল কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে।

এক তদন্তকারীর মন্তব্য, দোকানে সিসিটিভি খারাপ থাকায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিতকরণে সমস্যা হচ্ছে। পাশের দোকানের সিসিটিভি থেকে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, তাদের মুখ মঙ্গোলীয় ধাঁচের। কথা বলছিল বাংলা ও হিন্দিতে। বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশ জেনেছে, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় পাঁচ জন ছিল। তারা ঢাকুরিয়ার দিক থেকে সম্ভবত হেঁটেই এসেছিল। কাজ শেষ করে যাদবপুর থানার দিকে চলে যায় দু’জন। তিন জনকে ঢাকুরিয়ামুখী একটি বাসে উঠতে দেখা যায়।

কয়েক মাস আগেই রাস্তার ঠিক উল্টো দিকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ছ’লক্ষ টাকার কেপমারি হয়েছিল। পুলিশ সেই দুষ্কৃতীদের এখনও ধরতে পারেনি। তার মধ্যেই এ দিনের এই ডাকাতি। ঘটনাস্থলে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ পেয়েছে। তার মধ্যে করাত, হাতুড়ি, ছেনি, স্ক্রু ড্রাইভার ছিল। দোকানে একটি বর্ষাতিও ফেলে গিয়েছে তারা। পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা সম্ভবত কোনও চুরি-চক্রের লোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE