Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চার বছরের মেয়েকে খুন করে লুকিয়ে রাখল বাবা

সকাল থেকে খোঁজ মিলছিল না চার বছরের মেয়ের। প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুঁজতে বেরিয়েছিল বাবাও। তবে বাবার আচরণে সন্দেহ হয়েছিল পড়শিদের। তাঁরাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে ওই যুবক স্বীকার করে, নিজেই মেয়েকে খুন করে রেল সেতুর নীচে লুকিয়ে রেখেছে সে।

সানিয়া খাতুন

সানিয়া খাতুন

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

সকাল থেকে খোঁজ মিলছিল না চার বছরের মেয়ের। প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুঁজতে বেরিয়েছিল বাবাও। তবে বাবার আচরণে সন্দেহ হয়েছিল পড়শিদের। তাঁরাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে ওই যুবক স্বীকার করে, নিজেই মেয়েকে খুন করে রেল সেতুর নীচে লুকিয়ে রেখেছে সে।

শুক্রবার সেখান থেকেই সানিয়া খাতুন নামে ওই শিশুটির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগর থানার আলমবাজার এলাকায়। মেয়েকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বাবাকে। ধৃতের নাম সাদ্দাম হুসেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, আলমবাজারের সারদাপ্রসাদ ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা আফসানা খাতুনের সঙ্গে কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়েছিল সাদ্দামের। আফসানা আলমবাজারে তাঁর মায়ের কাছেই থাকতেন। আলমবাজারের কালীবাড়ি এলাকায় একটি হোটেলের কর্মী সাদ্দাম মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে বৌ ও মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে যেত।

পুলিশ জানায়, ২১ অগস্ট বেলা ১১টা নাগাদ আলমবাজারের একটি দোকানে সাদ্দামের সঙ্গে সানিয়াকে দেখেছিলেন তার দিদিমা শাহিদা বিবি। বাবার সঙ্গে মেয়েকে দেখে কোনও সন্দেহ করেননি। তবে দুপুর গড়িয়েও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান তাঁরা। শাহিদা বিবি জানান, দুপুর দেড়টা নাগাদ একাই বাড়ি ফেরে সাদ্দাম। সানিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে বলে সে কিছু জানে না। এর পরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে খুঁজতেও বেরোয় সাদ্দামও। কিন্তু তিনটে পর্যন্ত বরাহনগরের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও শিশুটির সন্ধান মেলেনি। শাহিদা বিবি বলেন, “দুপুর তিনটেয় একটু কাজ আছে বলে চলে যায় সাদ্দাম। ফেরে সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ।”

স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ দাস বলেন, “সাদ্দামের মুখ-চোখ দেখে সন্দেহ হয়েছিল। মেয়ে কোথায় রয়েছে বলার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকি।” ক্ষুব্ধ পড়শিরা তাকে মারধর শুরু করলে সাদ্দাম জানায়, স্ত্রী সঙ্গে ঝগড়ার জেরে সানিয়াকে ডানকুনিতে রেখে এসেছে সে। কিন্তু সেখানেও সানিয়ার খোঁজ মেলেনি। এর পর বরাহনগর থানার পুলিশ এসে সাদ্দামকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ওই যুবক বলে বালির নিশ্চিন্দায় তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে। তল্লাশি করতে গিয়ে খালি হাতেই ফিরে আসেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানায়, শেষে রাতে জেরার চাপে সাদ্দাম স্বীকার করে ২১ অগস্ট সকালে চকোলেট কিনে দিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে সানিয়াকে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের কাছে রাজার মাঠ এলাকায় নিয়ে যায় সে। সেখানে রেলের কালভার্টের নীচে মেয়েকে খুন করে। তার পরে সেতুর খাঁজে লুকিয়ে রাখে ছোট্ট মেয়েটির দেহ।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রী আফসানার সঙ্গে বেশ কয়েক মাস ধরেই বনিবনা হচ্ছিল না সাদ্দামের। দুই মেয়েও তার কাছে আসতে চাইত না। প্রতিনিয়ত নেশা করার ফলে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ওই যুবক।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল বলেন, “পুলিশকে অনুরোধ করেছি ওকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE