হাসিরানি সান্যাল
হরিদেবপুর-কাণ্ডে নিজেদের অবস্থান থেকে যে সরছে না তারা, বৃহস্পতিবার তা আরও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল কলকাতা পুলিশ। অর্থাৎ, সদ্য স্বামীহারা মানসিক ভাবে অসুস্থ বৃদ্ধাকে উত্ত্যক্ত করা যুবকদের পাশেই থাকছেন আইন রক্ষকেরা।
তবে ফেসবুকে আত্মপক্ষ সমর্থনের যত চেষ্টাই হোক না কেন, পুলিশের এই ভূমিকা দেখে সমালোচনায় মুখর সমাজকর্মীদের অনেকেই। অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্প নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষের যেমন প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ ‘প্রণাম’ চালায় কী করে? সদ্য স্বামীকে হারানো এবং অসুস্থ বৃদ্ধার যে পাড়ার ছেলেদের নয়, মনোবিদের সাহায্য দরকার, তা কি বোঝেনি পুলিশ?’’
বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে রাজ্য মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে ঘটনাটি নিয়ে সবিস্তার জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানোর কথা ভাবছি।’’ কমিশন সূত্রের খবর, ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।
গত শনিবার রাতে হরিদেবপুর থানার ১২০৭/১সি ওস্তাদ আমির খান সরণির একটি ফ্ল্যাট থেকে গৃহকর্তা অমর সান্যালের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, চার দিন ধরে ওই দেহ আগলে বসেছিলেন অমরবাবুর স্ত্রী হাসিরানিদেবী। পুলিশের আরও দাবি, বৃদ্ধা মানসিক ভাবে অসুস্থ। দেহ বার করার পরেই ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীদের উপস্থিতিতে পাড়ার একদল যুবক ওই ফ্ল্যাটে ঢোকে এবং মোবাইলে হাসিরানিদেবীর ভিডিও রেকর্ডিং করতে শুরু করে। তারা হাসিরানিদেবীর উদ্দেশে নানা টিপ্পনী কাটতে থাকে। বৃদ্ধাকে রীতিমতো জেরা করতে থাকেন তাঁরা। বারবার ওই যুবকদের বেরিয়ে যেতে বললেও, উত্ত্যক্তকারীরা তা শোনেননি। কেন মহিলা পুলিশ কিংবা পাড়ার মহিলাদের পাঠানো হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মীদের অনেকেই। মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কেন যোগাযোগ করা হল না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। শাশ্বতীদেবীর মন্তব্য, এ ভাবে পাড়ার ছেলেদের ওই বৃদ্ধার বাড়িতে ঢোকার স্বাধীনতা দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। কারণ, যুবকেরা বৃদ্ধার আরও ক্ষতি করতে পারতেন।
ফেসবুক প্রতিবেদনে কলকাতা পুলিশের দাবি, ওই রাতে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা দু’-একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। কেউ বলেছেন, অত রাতে লোক পাঠানো মুশকিল, কেউ বলেছেন, চেষ্টা করবেন পাঠাতে, তবে তা অনিশ্চিত।
পুলিশের সাফাই, এমতাবস্থায় বৃদ্ধাকে বোঝানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। স্থানীয় মানুষ, যাঁরা বৃদ্ধার পরিচিত, তাঁদের সাহায্য নেওয়া অন্যায় কিংবা অমানবিক কি না, পাল্টা সেই প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। পুলিশের আরও দাবি, হাসিরানিদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তারাই। তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে বৃদ্ধা লুম্বিনী পার্ক মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার এ দিন বলেন, ‘‘ওই দিন পুলিশ ঠিক কাজ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনগত ভাবে যা যা করা দরকার, সেটাই করেছে পুলিশ। সেখানে মহিলা পুলিশ বা পাড়ার মহিলারা থাকলেন কি না, সেটা এ ক্ষেত্রে গৌণ।’’ ওই পুলিশকর্তার আরও দাবি, মানসিক ভাবে অসুস্থ বৃদ্ধার প্রতি কী ধরনের ব্যবহার করতে হয়, সেটা পুলিশের ভালই জানা আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy