কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে মার খেলেন একদল ছাত্র-ছাত্রী। দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ! যার জেরে ফের মাথাচাড়া দিল অসহিষ্ণুতা-বিতর্ক!
হায়দরাবাদের দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দুপুরে উত্তর কলকাতায় আরএসএসের রাজ্য দফতর কেশব ভবনের কাছে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল অতি-বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ইউএসডিএফের। তাদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই হঠাৎ আরএসএস সমর্থকেরা বিক্ষোভকারীদের মারধর করেন। ঘটনা আরও অন্য মাত্রা পেয়েছে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিবৃতিতে। তিনি মন্তব্য করেছেন, বাড়ির সামনে বিনা কারণে কেউ অশান্তি করতে এলে কী করা যাবে? কাদের সঙ্গে কী আচরণ করতে হয়, আরএসএসের লোকেদের তা জানা আছে! যে মন্তব্যে ‘অসহিষ্ণুতা’র প্রকট ছায়াই দেখছেন বাম এবং কংগ্রেস নেতারা।
বিক্ষোভকারীরা যাতে কেশব ভবনের মধ্যে ঢুকে না পড়েন, তার জন্য এ দিন মোতায়েন ছিল পুলিশ। কিন্তু হঠাৎই আরএসএসের কিছু লোকজন বেরিয়ে এসে রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারী এক ছাত্রের অভিযোগ, ‘‘আরএসএসের গুন্ডারা আমাদের রাস্তার উপরে মেরেছে। কেউ কেউ ডান্ডা নিয়ে চড়াও হয়েছিলেন। পুলিশ সেখানে ছিল। কিন্তু তারা ছিল একেবারেই নিষ্ক্রিয়!’’ হামলা করার অভিযোগ অস্বীকার করে আরএসএসের এক রাজ্য নেতা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা তো বারবার পুলিশকে বলেছিলাম, ওঁদের মধ্যে দু’জনকে ভিতরে আসতে দিন। তাঁদের জন্য আমরা খাবার রেখেছিলাম। আমাদের বই, নথিপত্র ওঁদের পড়াতে চেয়েছিলাম!’’ তা হলে বিক্ষোভকারীদের গায়ে হাত তুলল কে, তার সদুত্তর মেলেনি! ঘটনার সময়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের হেনস্থা করারও অভিযোগ উঠেছে। যদিও আরএসএসের দাবি, তেমন কিছু ঘটে থাকলে, তার দায় পুলিশের!
এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর (যিনি আরএসএস থেকেই অল্প দিন আগে বিজেপি-তে এসেছেন) প্রাথমিক দাবি, হায়দরাবাদের ওই ছাত্রের আত্মহত্যার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তবু তা নিয়ে জোর করে রাজনীতি করা হচ্ছে। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাড়ির সামনে বিনা কারণে কেউ অশান্তি করতে এলে কী করা যাবে? আমার মনে হয়, আরএসএসের লোকেরা যথেষ্ট সংযমী ও বিচক্ষণ! কাদের সঙ্গে কী আচরণ করতে হয়, ওঁদের জানা আছে!’’ আরএসএসের মহানগর সঙ্ঘচালক সুশীলকুমার রায় আবার বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘যথাযথ আলোচনাতেই যে কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে। আরএসএস সম্পর্কে ভুল ধারণা ছেড়ে তরুণ প্রতিবাদীদের আলোচনার টেবিলে বসতে আহ্বান জানাচ্ছি। জাতি নির্মাণের প্রক্রিয়ায় উৎসাহী হলে তাঁরা আরএসএসে যোগও দিতে পারেন। অপ্রয়োজনীয় প্রতিবাদে শুধু সময় নষ্ট হয়! কোনও ফল পাওয়া যায় না’।
বিজেপি এবং আরএসএসের বক্তব্য জানার পরেই ফের সরব হয়েছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ীর কথায়, ‘‘মনুবাদী সংস্কৃতি সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে আরএসএস। এই কলকাতার বুকেও তারা প্রতিবাদীদের মেরে শায়েস্তা করতে চাইছে!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোনও সংগঠনেরই প্রতিবাদের অধিকার আছে। প্রতিবাদের প্রতি এটা কি সহিষ্ণুতার প্রকাশ?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy