Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মাঝরাতে এখনও কানে আসে বাঘ-সিংহের ডাক

খিদিরপুরের এক মধ্যবিত্ত পাড়া গোপাল ঘোষ লেন। পাড়ার অলিখিত চৌহদ্দির মধ্যে আছে গঙ্গাধর ব্যানার্জি লেন। ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে এক দিকে পাড়াটা মিশেছে মনসাতলা রো-এ। অন্য দিকে, মনসাতলা লেন। কাছেই হরিসভা স্ট্রিট।

মজা: খেলার ফাঁকে কচিকাঁচারা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মজা: খেলার ফাঁকে কচিকাঁচারা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

গোপাল ঘোষ লেন
সমর দত্ত শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

খিদিরপুরের এক মধ্যবিত্ত পাড়া গোপাল ঘোষ লেন। পাড়ার অলিখিত চৌহদ্দির মধ্যে আছে গঙ্গাধর ব্যানার্জি লেন। ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে এক দিকে পাড়াটা মিশেছে মনসাতলা রো-এ। অন্য দিকে, মনসাতলা লেন। কাছেই হরিসভা স্ট্রিট।

সেই কাক ভোরে এখানে ঘুম ভাঙে আজানের সুরে। আশপাশে বেশ কিছু গাছ থাকায় পাখির ডাকে সকালটা বড় স্নিগ্ধ। পাড়ার মুখের ঠিক বিপরীতে সেন্ট থমাস স্কুল। স্কুলের চৌহদ্দি শেষ হলেই আলিপুর চিড়িয়াখানা। রাতের দিকে শোনা যায় বাঘ-সিংহের ডাক।

পাড়াটা আধুনিক ঝাঁ চকচকে না হলেও প্রাণে ভরা। তাই এখনও নিঃসঙ্গতা কিংবা একাকীত্ব এ পাড়ার আবহাওয়াকে গ্রাস করতে পারেনি। পুরনো প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ, যোগাযোগ আর আড্ডা সামজিক চরিত্রটাকে অক্ষুণ্ণ রেখেছে। কিছু রকে এখনও বসে আড্ডা। তবে যোগ দেন মূলত প্রবীণেরা। কাছেই পাঁচুবাবুর চায়ের দোকান। সেটাই আড্ডার অন্যতম ঠিকানা। দুপুরের কয়েক ঘণ্টা বাদ দিলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখা যায় নানা বয়সের মানুষের ভিড়। এক সময়ে এখানেই আড্ডা দিতে দেখেছি উত্তমকুমার, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কাছেই নেতাজি সঙ্ঘের ক্লাবে এক সমেয় ক্যারম খেলতেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানো এবং সাহায্যের হাত বাড়নো পাড়ার মানুষের চরিত্রগত গুণ। সময়ের প্রভাবে সেটা ফিকে হয়ে আসেনি। এখনও উৎসবে অনুষ্ঠানে এটা-ওটা পাঠানো হারিয়ে যায়নি। মনে পড়ে পাড়ার সমীর দত্ত, চিত্ত শর্মা, বরেন বসুর কথা। যাঁরা বিপদে সকলের পাশে দাঁড়াতেন। এ পাড়ার মানুষ যাঁরা বিদেশে থিতু, মাঝেমাঝেই ফোন করে পাড়ার খুটিনাটি ব্যাপারে খোঁজ নেন।

এখানে আগের চেয়ে নাগরিক পরিষেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই পাড়াটা পরিচ্ছন্ন থাকছে। তবে বর্ষায় পাড়ার মুখে এখনও জল জমে। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হলে হয়তো এ সমস্যা মিটবে। পাড়ার এক দিকের গলিতে বেপরোয়া বাইক চলাচল বন্ধ করেত রয়েছে ছোট থাম। এখনও এ দিক-ও দিক থেকে আচমকাই চলে আসে বেপরোয়া বাইক।

কাছেই ২৫ পল্লির মাঠ। সেখানে পাড়ার ছেলেদের চেয়ে বাইরের ছেলেরাই বেশি খেলাধুলো করে। তবে পাড়ার কচিকাঁচাদের এখনও ছুটির দিনে গলিতে খেলতে দেখি। কাছেই বহু প্রাচীন আনন্দময়ী কালীমন্দির। পাড়ার পুজো মানেই পঁচিশ পল্লির পুজো।

আগে কাছাকাছি বেশ কিছু পাঠাগার ছিল। সেগুলি আজ আর নেই। কাছেই মনসাতলা লেনে রয়েছে শতবর্ষ অতিক্রান্ত মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরি। হারিয়ে গিয়েছে পরিচিত কত ফেরিওয়ালার ডাক। তার পরিবর্তে ‘হরেক জিনিস তিরিশ টাকা’-র কৃত্রিম ঘোষণা মিশে যায় পাড়ার আকাশ-বাতাসে।

তাতেও অবশ্য মোহভঙ্গ হয় না। তিন পুরুষের শিকড়ের টান যে!

লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Memory South Kolkata Alipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE