Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবাসনের মিটার বক্সে আগুন, ছড়াল আতঙ্ক

বেলা তখন সাড়ে দশটা। রোজের মতোই কাজ সেরে বেরোবেন বলে দরজা খুলেছিলেন পরিচারিকা। বিক্রমগড়ের আবাসনের একতলা থেকে বেরোতে গিয়েই চোখে পড়ে, সিঁড়ির তলার মিটার বাক্স থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া।

মরিয়া: এ ভাবেই পাশের ছাদে পৌঁছন বাসিন্দারা। শনিবার, বিক্রমগড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মরিয়া: এ ভাবেই পাশের ছাদে পৌঁছন বাসিন্দারা। শনিবার, বিক্রমগড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০১:০১
Share: Save:

ব্যস্ত সকালে হঠাৎ আগুন আবাসনের মিটার বক্সে। আবাসনের ছাদ থেকে পাশের ছাদে পালিয়ে বাঁচলেন বাসিন্দারা। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন কিছু ক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও দিনভর আতঙ্কে থমথম করল এলাকা। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার যাদবপুরের বিক্রমগড় এলাকার এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই।

বেলা তখন সাড়ে দশটা। রোজের মতোই কাজ সেরে বেরোবেন বলে দরজা খুলেছিলেন পরিচারিকা। বিক্রমগড়ের আবাসনের একতলা থেকে বেরোতে গিয়েই চোখে পড়ে, সিঁড়ির তলার মিটার বাক্স থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। ঘরে ঢুকে মালকিনকে খবর দিতে দিতেই
ধোঁয়ার চোটে দম আটকে আসার অবস্থা। ঘরের ভিতর থেকে মালকিন রাকা বসাক বেরিয়ে এসে পাশের ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজাতেই বিস্ফোরণের শব্দ!

রাকা ছুটে যান ঘরে, দু’মাসের সন্তান আভাসের কাছে। মিটার বাক্স তত ক্ষণে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করছে। পরপর ছোট ছোট বিস্ফোরণ ঘটছে সশব্দে। দিশাহারা রাকার মতোই তখন সিঁড়ি পর্যন্ত এসে থমকে গিয়েছেন আবাসনের অন্য বাসিন্দারা। ঘন কালো ধোঁয়া আর আগুনের মধ্যে দিয়ে কেউই বেরোতে পারছেন না। পথচারীরা এবং আশপাশের দোকানদারেরা তত ক্ষণে বালি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। আতঙ্কিত কণ্ঠে পরে রাকা বলেন, ‘‘আমি বারান্দা দিয়ে চিৎকার করতে থাকি, আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান কেউ! আবাসনেরই এক দোকানদার দাদা এগিয়ে এসে, বারান্দার রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে ওকে বার করে পাশের বাড়িতে পৌঁছে দেন।’’

তখন আবাসন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সকলেই বেরোতে চাইছেন, কিন্তু আগুনের মধ্যে দিয়ে তা সম্ভব নয়। তত ক্ষণে রাকার পাশের ফ্ল্যাটের সুস্মিতা কর খুলে ফেলতে পেরেছেন পিছনের একটি ছোট্ট দরজা। সেখান দিয়েই দু’বছরের মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি, বোনকে নিয়ে বেরোন সুস্মিতা। বেরোন রাকা এবং তাঁর পরিচারিকাও।

একতলার দু’টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা এ ভাবে বেরোতে পারলেও, উপরের তলার বাসিন্দারা তখনও ঘরে আটকে। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় দম আটকে এলেও নামার উপায় নেই। শেষে সকলে মিলে ছাদে ওঠেন উপরের তলার বাসিন্দারা। কিন্তু বেরোনোর উপায় কই! মুশকিল আসান করল ছাদেই রাখা তিনটি মই। পাশের ফ্ল্যাটের দূরত্ব বড় জোর ফুট পাঁচেক। কার্নিশ থেকে লাগানো হল মই। কিন্তু সকলের পক্ষে ওই মই বেয়ে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না।

ইতিমধ্যে পাশের ফ্ল্যাটের অনেকেই বিষয়টা বুঝতে পেরে ছাদে উঠে আসেন। মই বেয়ে পারাপার করতে অসুবিধা হচ্ছে দেখে মাথায় অভিনব বুদ্ধি আসে নবম শ্রেণির পড়ুয়া রণজয় সরকারের। ফ্ল্যাটের পাশেই কাঠের দোকান, সেখান থেকে পোক্ত দু’টো বড় পাটাতন আনানোর ব্যবস্থা করে সে। সেই পাটাতনই দুই ছাদের সেতুবন্ধন করে। পাটাতন বেয়ে সহজেই পাশের ছাদে পৌঁছে নিরাপদে নেমে যান বাসিন্দারা। ততক্ষণে চলে এসেছেন দমকলকর্মীরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE