প্রতীকী ছবি।
কুড়ি বছরের ছাত্রীটি ইদানীং নিয়মিত মাদক নিচ্ছেন। তাঁর ফোন নম্বরটি পাওয়া গিয়েছিল এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই।
পড়ন্ত বিকেলে তাঁকে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করেন অফিসার। বলেন, ‘‘আমার কাছে আছে। আপনি কিনবেন?’’ সত্যি তিনি মাদক বিক্রেতা নাকি ফাঁদ পাতার জন্য ফোন করেছেন, তা যাচাই করেননি ওই ছাত্রী। রাতের অন্ধকারে শহরের একটি জায়গায় ডেকে নেন অফিসারকে, মাদক কেনার উদ্দেশ্যেই। অফিসার পৌঁছে দেখেন ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরা, সম্ভ্রান্ত ঘরের তরুণী দাঁড়িয়ে আছেন মাদকের আশায়।
নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো-র (এনসিবি) অফিসারেরা তরুণীকে তুলে আনেন রাজারহাটের অফিসে। একই ভাবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফাঁদে পড়া আরও বেশ কয়েক জন কলেজ পড়ুয়াকে আনা হয় সেখানে। এমন পরিস্থিতিতেও তাঁদের ‘ভয়হীন ভাব’ দেখে অবাক হয়ে যান অফিসারেরাই।
ইতিমধ্যেই পুলিশ জেনেছে, শহরের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ইদানীং মাদক বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে। সেই মাদকের গ্রাহক কারা, তা জানতেই অভিযান চালিয়েছিল এনসিবি। তাতেই ধরা পড়েন শহরের বিভিন্ন এলাকার পড়ুয়ারা। রবিবার যাদবপুর থানা এলাকার প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডে মাদকের খপ্পরে পড়ে অমিত রায় নামে এক যুবকের মৃত্যুর হয়। এর পরেই আরও নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
এনসিবি-র পূর্ব ভারতের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, শহরের যে সব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানুষের রোজগার কম, সেই এলাকায় বেশি মাদক বিক্রি প্রমাণ মিলছে। ওই কর্তার বক্তব্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে এমন কিছু এলাকা রয়েছে। ফলে সেখানে পরিস্থিতি খুবই জটিল। সূত্রের খবর, কলেজের পড়ুয়াদের প্রয়োজন মতো বিক্রি হয় মাদক। পড়ুয়াদের হাতে তুলনায় কম টাকা থাকে বলে ছোট ছোট পুরিয়া করে বিক্রি হয় গাঁজা, চরস ও হেরোইন। এক-একটি পুরিয়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। ২-৪ গ্রাম মাদক থাকে গাঁজা-চরসের পুরিয়ায়, হেরোইনে থাকে এক গ্রামেরও কম।
সম্প্রতি শহরের বেশ কিছু বেসরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত মাদক সেবন করছেন জানতে পেরে কর্তৃপক্ষদের ডেকে সতর্ক করে এনসিবি। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এত দিন পুস্তিকা, লিফলেট, পোস্টারে সচেতনতার প্রচার হত। কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ বার পোস্টারে শাস্তির মেয়াদও লিখে দিতে বলা হয়েছে। যাতে শাস্তির মেয়াদ দেখে ভয় পান পড়ুয়ারা।’’ কিন্তু ধৃত পড়ুয়াদের বেপরোয়া আচরণ দেখে অবাক হন কর্তারা। পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়েও চিন্তায় বাড়ে তাঁদের।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বারবার মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করার কথা তুলেছেন। তা করতে গেলে সবচেয়ে জরুরি মাদক সরবরাহ বন্ধ করা বলেই মনে করছেন এনসিবি কর্তারা। এনসিবি-র এক অফিসারের কথায়, ‘‘কলেজ চত্বরে পুরিয়া বিক্রি করেন মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকেরা। এঁদের মধ্যে কেউ চায়ের দোকানে কাজ করেন, কেউ হয়তো মুটে-মজুরের কাজ করেন। পাশাপাশি নিজের নেশার টাকা জোগারের জন্য এই কাজও করেন।’’ এই বিক্রেতাদের ধরে বিশেষ লাভ নেই বলে মনে করেন এসিবি কর্তারা। এনসিবি সূত্রের খবর, কলকাতা শহরের এই মাদক সরবরাহ হয় বন্দর, এন্টালি, শিয়ালদহ এলাকা থেকে। ধরা। ভিন্ রাজ্য বা প্রতিবেশী দেশ থেকে মাদক আসার সময়ে তা বাজেয়াপ্ত করতে পারলে কাজ হবে বলেই মত তাঁদের। ‘‘তবে জোগানের চেনটাই ভেঙে দেওয়া যাবে,’’— বলেন এক অফিসার।
তবে শুধু কম পয়সার মাদকই নয়, এ রাজ্যে দিব্যি বিকোচ্ছে দামি নেশার দ্রব্যও। পড়ুয়াদের পাশাপাশি মাদকের নেশা এখন ছড়িয়েছে উচ্চবিত্তদের মধ্যেও। এমডিএমএ, এক্সট্যাসি, বাওয়া-র মতো ট্যাবলেট বা পার্টি ড্রাগ বিক্রির হিসেব দেখলে তা বোঝা যায় বলে এনসিবি সূত্রের খবর। এনসিবি অফিসারদের মতে, ‘‘এই সব মানুষদের ধরলেও সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ আসতে থাকে। ফলে তাঁদের নিয়ে ভেবে ততটা লাভ হয় না। তাই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার যাতে না বেড়ে যায়, প্রধানত সে দিকেই নজর রাখা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy