ধৃত সাবা করিম এবং তৌসিফ আহমেদ। নিজস্ব চিত্র
বর্ধমান স্টেশন থেকে যোধপুর এক্সপ্রেসে উঠলেন চার জন শক্তপোক্ত চেহারার যুবক। ট্রেন ছাড়তেই হাতে একটি ছবি নিয়ে শুরু হল খোঁজ। কখনও কামরার ভিতরে, কখনও শৌচালয়ের সামনে বিভিন্ন লোকের মুখ মিলিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু মিলছিল না। শেষমেশ হাওড়া ঢোকার মুখে ছবির সঙ্গে মিলে গেল এক যুবকের মুখ। তার পরেই চার জন মিলে ঘিরে ধরেন ওই যুবককে। হাওড়ায় পৌঁছতেই গাড়িতে চাপিয়ে সোজা তিলজলা থানায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই চার জন তিলজলা থানার অফিসার। ট্রেন থেকে পাকড়াও করা যুবকের নাম সাবা করিম। তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরই এক বন্ধুর বাড়িতে রত্ন ও টাকা চুরির অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের দাবি, সাবার হেফাজত থেকে চুরি যাওয়া রত্ন ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সাবাকে জেরা করে তৌসিফ আহমেদ নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বাড়ি নারকেলডাঙা থানা এলাকায়। তৌসিফের কাছ থেকে প্রায় ৬০টি রত্ন পাওয়া গিয়েছে।
ঘটনাচক্রে রত্ন ব্যবসায় সহজে লাভের সুযোগে এমন নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে। মাস কয়েক আগেই জাকারিয়া স্ট্রিটে টাকা ও রত্ন লুঠের জন্য মহম্মদ সেলিম নামে এক ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৫ জানুয়ারি সাজ্জাদ আহমেদ নামে তপসিয়া রোডের এক রত্ন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তিনি সপরিবার এক পরিচিতের বাড়ি যান। পৌনে ন’টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তখন আলমারি থেকে টাকা বার করতে গিয়ে সাজ্জাদ দেখেন, নগদ দেড় লক্ষ টাকা এবং বেশ কিছু দামি রত্ন উধাও। তাঁর দাবি, ঘর এবং আলমারির তালাচাবি কোনও কিছুই ভাঙা ছিল না। কী ভাবে তালা না ভেঙে এমন চুরি হল তদন্তে নেমে প্রথমেই পুলিশ তা খতিয়ে দেখতে শুরু করে। কেন এত দিন পরে চুরির অভিযোগ দায়ের হচ্ছে তা নিয়েও সন্দেহ জাগে তদন্তকারীদের। যদিও সাজ্জাদ তাঁদের জানান, চুরির ধরন দেখে তাঁর সন্দেহ হয়েছে যে পরিবার-পরিজনের কেউ এই ঘটনায় জড়িত। তাই সম্মানহানির প্রথমে তিনি পুলিশে জানাতে চাননি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই পরিচিতের সূত্র ধরেই তদন্তে উঠে আসে সাবার নাম। জানা যায়, কোথায় রত্ন থাকে তার হদিস তিনি জানতেন। এর পরেই সাবার মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোন করা হলে দেখা যায় সেটি বন্ধ। মোবাইল টাওয়ার লোকেশন থেকে দেখা যায় রাজস্থানের অজমেঢ় রয়েছেন সাবা। এবং আগের নম্বরটির বদলে অন্য একটি নম্বর ব্যবহার করছেন তিনি। এর পরেই সাবার উপরে সন্দেহ দৃঢ় হয়। পুলিশের দাবি, মোবাইলে নজরদারি করে জানা যায়, যোধপুর এক্সপ্রেসে হাওড়ায় ফিরছেন তিনি। তিলজলা থানার ওসি দেবব্রত সরকার এবং অতিরিক্ত ওসি দেবল বসুর নির্দেশে চার জন অফিসার শুক্রবার রাতে বর্ধমান স্টেশন থেকে ট্রেনে চাপেন। সাবা কোন কামরায় রয়েছেন তা জানা না থাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা জানান, সাজ্জাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে সাবা নকল চাবি তৈরি করিয়েছিলেন। ১০ জানুয়ারি বাড়ি ফাঁকা পেয়ে নকল চাবি দিয়ে তালা খুলে রত্ন এবং টাকা লুঠ করে অজমেঢ় পালিয়ে যান তিনি। ট্রেনে ধরা পড়ার পরে প্রথমে দোষ কবুল করতে চাননি সাবা। কিন্তু থানায় নিয়ে এসে চাপ দিতেই দোষ কবুল করে তৌসিফের নাম এবং চোরাই রত্নের হদিস পুলিশকে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy