Advertisement
০৭ মে ২০২৪

কড়া দাওয়াই নয়, শৃঙ্খলার খোঁজে উপাচার্য চান আলোচনা

শিক্ষায় শৃঙ্খলা চান ঠিকই। কিন্তু তার জন্য পুলিশি দাওয়াই বা অন্য কোনও রকম কঠোরতা চান না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে সকলের মতামত নিয়ে, আলাপ-আলোচনা করে এগোনো হবে বলে সুরঞ্জনবাবু সোমবার জানিয়ে দেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন এক অনুষ্ঠানে জানান, গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে পারেন সকলেই। কিন্তু নিজেদের দায়িত্ব সম্বন্ধেও সচেতন থাকতে হবে তাঁদের।

কলকাতা সায়েন্স কলেজের শারীরবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। সোমবার।  নিজস্ব চিত্র

কলকাতা সায়েন্স কলেজের শারীরবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৪:০১
Share: Save:

শিক্ষায় শৃঙ্খলা চান ঠিকই। কিন্তু তার জন্য পুলিশি দাওয়াই বা অন্য কোনও রকম কঠোরতা চান না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।

ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে সকলের মতামত নিয়ে, আলাপ-আলোচনা করে এগোনো হবে বলে সুরঞ্জনবাবু সোমবার জানিয়ে দেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন এক অনুষ্ঠানে জানান, গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে পারেন সকলেই। কিন্তু নিজেদের দায়িত্ব সম্বন্ধেও সচেতন থাকতে হবে তাঁদের।

প্রায় এক সপ্তাহ ক্লাস বন্ধ থাকার পরে এ দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে শারীরবিদ্যা বিভাগে ফের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। ক্লাসে আসার জন্য ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন উপাচার্য। ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এ দিন কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সুরঞ্জনবাবু বলেন, “আপাতত ক্যাম্পাসে কোনও উত্তেজনা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ক্লাস শুরু হয়েছে।”

উপাচার্যের মতে, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-প্রশাসনিক কর্তা সকলের সুসম্পর্ক প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “ছাত্র-শিক্ষকদের বলা হয়েছে, পারস্পরিক সুসম্পর্কে চিড় ধরার সামান্য আভাস পেলেই যেন আমাকে, দুই সহ-উপাচার্য বা রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়।” সেই সূত্রেই উপাচার্য জানান, কাজের সময়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-অবস্থান-মিছিল চান না তিনি। কিন্তু কড়া হয়ে বা পুলিশের সাহায্যে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখার পক্ষপাতী তিনি নন।

৭ জুলাই শারীরবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা রোশেনারা মিশ্র এবং তাঁর কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে ঘেরাও করে রাখার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। তার পরেই, নিরাপত্তার দাবিতে ৮ জুলাই, মঙ্গলবার থেকে ক্লাস বয়কট করেন ওই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। বুধবার ওই ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন সেই সব পড়ুয়া এবং বিভাগের কিছু রিসার্চ স্কলার। টিএমসিপি-ও পাল্টা বিক্ষোভ দেখায়। সে-দিনই সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেটের বৈঠকের বাইরে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, গত শুক্রবার ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে এবং ক্লাসে ফেরার আবেদন জানিয়ে প্রেস-বিবৃতি জারি করতে হয় উপাচার্যকে। তাতে সাড়া দিয়েই সোমবার শারীরবিদ্যা বিভাগের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে আতঙ্কের রেশ কাটেনি। ছাত্রছাত্রীরা ভীত। রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রের ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতে কড়া পদক্ষেপ না-করে সকলের মতামত নিয়ে এগোনোর যে-সিদ্ধান্ত উপাচার্য নিচ্ছেন, তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, প্রশ্ন তুলছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা।

বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের কথায়, “এই বিষয়ে মতামত নেওয়ার কী আছে, বুঝতে পারছি না। কর্তৃপক্ষ ভুল করছেন। বরং শৃঙ্খলা ফেরাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে সকলকে জানিয়ে দিন।” প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই বিষয়ে মতামত নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। দাবিদাওয়া থাকলে সংগঠনগুলি লিখিত ভাবে তা কর্তৃপক্ষকে জানাক। চিৎকার করে, মিছিল বা অবস্থান করে নয়।”

ইতিপূর্বে যখনই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ নরম অবস্থান নিয়েছেন। ফলে কাজের সময়ে ঘেরাও, বিক্ষোভ, মিছিলের বিরাম নেই। তা হলে কড়া দাওয়াই প্রয়োগ করতে পিছপা কেন তাঁরা?

“আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ণ করতে চাই না। তাই সমাধানের উপায় বার করতে সংশ্লিষ্ট সকলোর মতামত চাইব,” বলছেন উপাচার্য। তবে সুরঞ্জনবাবু যা-ই বলুন, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাংশের মতে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে গিয়ে ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা যে শিকেয় উঠছে, গত সপ্তাহে সিন্ডিকেটের বৈঠকের বাইরে টিএমসিপি-র ওই বিক্ষোভ তার সাম্প্রতিকতম নজির। এই ক্ষেত্রেও কি বিশ্ববিদ্যালয় কোনও ব্যবস্থা নেবে না?

জবাবে উপাচার্য এ দিন বলেন, “পিছনের দিকে না-তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।”

সন্ধ্যায় যোগেশ চৌধুরী কলেজের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর গলায় অনেকটা উপাচার্যের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। পার্থবাবু বলেন, “ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সকলেই নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশে এটা দরকার। কিন্তু নিজের নিজের দায়িত্বটাও তো দেখতে হবে।” একটু ব্যাখ্যা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ছাত্র সংসদকে বলেছি, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখাটা তাদের দায়িত্ব। শিক্ষকের দায়িত্ব পড়ানো। আর শিক্ষাকর্মীর দায়িত্ব সকলকে পঠনপাঠনের কাজে সাহায্য করা।”

কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও দল কেন তাদের রাশ টানছে না, সেই ব্যাপারে মন্ত্রী কিছু বলেননি। উল্টে সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তাঁর মন্তব্য, “রাজ্যের ৮৫৬টি কলেজের মধ্যে ৫-১০টিতে গোলমাল হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশ সেটাকেই বড় করে দেখাচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মনে করছেন, রাশ টানা তো দূরের কথা, মন্ত্রীর এই মন্তব্যে বিশৃঙ্খলাকারীরা প্রশ্রয় পাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE