Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আধভাঙা সেতু ভেঙেই ফেলা হোক, মিছিলের দাবিতে পা মেলাল স্কুল-কলেজও

‘বন্ধ করো ব্রিজ নির্মাণ, আর দেব না একটাও প্রাণ’। বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে এই স্লোগানে পড়ুয়াদের হাতে হাতে পোস্টার, প্লাকার্ড। উড়ালপুল ভাঙার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলালেন রাজস্থান বিদ্যামন্দির, এপিজে, উমেশচন্দ্র কলেজের পড়ুয়ারাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:৩৩
Share: Save:

‘বন্ধ করো ব্রিজ নির্মাণ, আর দেব না একটাও প্রাণ’।

বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে এই স্লোগানে পড়ুয়াদের হাতে হাতে পোস্টার, প্লাকার্ড। উড়ালপুল ভাঙার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলালেন রাজস্থান বিদ্যামন্দির, এপিজে, উমেশচন্দ্র কলেজের পড়ুয়ারাও। ভেঙে পড়া উড়ালপুলের কাছ থেকেই রবিবার সকাল এগারোটা নাগাদ মিছিল শুরু হয়। প্রায় দে়ড় ঘণ্টা বড়বাজার, পোস্তা, চিৎপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মিছিল শেষ হয় গিরিশ পার্কে।

রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ গণেশ টকিজের কাছে মালাপাড়ার মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী সদস্যের সংখ্যা ছিল একশো। ৩১ মার্চ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃতদের প্রতি শোক জানাতে বেশিরভাগ সদস্যের হাতে ছিল কালো ব্যাজ। উড়ালপুল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মিছিলকারীদের হাতে বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি ভাষায় লেখা পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন মালাপাড়ার মোড় থেকে পোস্তা হয়ে কালাকার স্ট্রিটে মিছিল পৌঁছতেই আশপাশের বেশকিছু মানুষ মিছিলে যোগ দেন। বটতলা স্ট্রিট, রবীন্দ্রসরণি, মদন চ্যাটার্জি লেন, রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট, বারাণসী স্ট্রিট, বিবেকানন্দ স্ট্রিট, গিরীশ পার্ক হয়ে গণেশ টকিজে মিছিল শেষ হওয়ার সময় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৫০।

মাথার উপর সূর্যের গনগনে তেজ উপেক্ষা করেই পড়ুয়া, স্থানীয় বাসিন্দারা টানা দেড় ঘণ্টা প্রায় তিন কিলোমিটার মিছিলে হাঁটেন। বিবেকানন্দ রোড, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটের বাসিন্দারা মূলত এদিনের মিছিলে সামিল হন। পাঁচ জায়গায় মিছিল থামিয়ে বক্তৃতাও দিলেন এদিনের মিছিলের আয়োজক ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’র সদস্যরা। মালাপাড়া মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে কালাকার স্ট্রিটে পৌঁছনোর পর ওখানে প্রায় দশ মিনিট বক্তৃতা দেন সমিতির সদস্যরা। উড়ালপুলের ভয়াবহতা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝান মিছিলকারীরা। মিছিলকারীদের বক্তব্য শুনতে বহু মানুষের ভিড় হতে দেখা যায়। কালাকার স্ট্রিট থেকে মিছিল পোস্তায় পৌঁছলে ওখানেও প্রায় পাঁচ মিনিট ভাষণ দেন সদস্যরা। এরপর মদন চ্যাটার্জি রোড, বারাণসী ঘোষ স্ট্রিট ও বিবেকানন্দ রোড সংযোগস্থল এবং সবশেষে গণেশ টকিজে কিছুক্ষণের জন্য বক্তৃতা দেন আয়োজকরা। মিছিলের আয়োজক ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’র সম্পাদক বাপি দাস বলেন, ‘‘মিছিলে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। কেবল আজ মিছিল করেই আমাদের কর্মসূচি থেমে থাকচে না। আমরা প্রত্যেক রবিবার এলাকায় মিছিল করে উড়ালপুল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করব।’’

৩১ মার্চ গণেশটকিজের কাছে বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ার ছবি তাঁদের চোখে এখনও ভাসে। আতঙ্কে তাঁরা এই উড়ালপুলের নিচে হাঁটতে পারেন না। মিছিলে অংশগ্রহণকারী আদিত্য খান্না বলেন, ‘‘উড়ালপুল তৈরি হওয়ার আগেই যেভাবে ভেঙে পড়ল তাতে আতঙ্কে ভুগছি। বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছি। মনে হয়, এই বুঝি উড়ালপুলের বাকি অংশ ভেঙে পড়ল।’’ বিবেকানন্দ রোডের উড়ালপুলের গা ঘেঁষেই রয়েছে রাজস্থান বিদ্যামন্দির। এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী খুশি শর্মা, দীপিকা বর্মারা এদিন মিছিলে অংশ নেন। খুশির কথায়, ‘‘উড়ালপুল আমাদের কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উড়ালপুলের পাশেই আমাদের স্কুল। রোজই ব্রিজের নিচে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার সময় আতঙ্কে থাকি। মনে হয়, মাথার উপর ব্রিজ ভেঙে পড়বে।’’ এপিজে’র গৌরব হর্ষের কথায়, ‘‘আমরা ব্রিজ চাইছি না।’’

এদিন মিছিলে একাধিক কলেজপড়ুয়াও অংশ নেন। উড়ালপুল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সরব হন তাঁরা। উমেশচন্দ্র কলেজের ছাত্রী চাঁদনি কেডিয়া জানান, আমাদের একটাই দাবি, এই উড়ালপুল ভেঙে দেওয়া হোক। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা প্রমাণ করল, উ়ড়ালপুল আদৌ নিরাপদ নয়।

উড়ালপুল ভেঙে ফেলার ঘটনার সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান এদিনের মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সংবাদমাধ্যমে বারবার দেখানো সত্ত্বেও উড়ালপুল নির্মাণে সাব-কন্ট্রাক্টর রজত বক্সিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। আমরা মনে করি, সরকার উড়ালপুল দুর্ঘটনায় দোষীদের আড়াল করছে। আমরা প্রকৃত তদন্ত চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vivekananda Flyover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE