Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বাসচালক কোথায়, হন্যে পরিবহণ নিগম

কলকাতার তিনটি পরিবহণ নিগমকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার পরে প্রচুর নতুন বাস কেনার ভাবনা রয়েছে রাজ্য পরিবহণ নিগমের। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সাহায্যে বছর তিনেক আগে প্রায় সাড়ে ছ’শো নতুন বাস পেয়েছে রাজ্য। তার উপরে রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগেও শ’খানেক নতুন বাস কিনেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৯:০০
Share: Save:

সন্ধান চাই!

পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিটিসি)-এর একমাত্র স্লোগান এখন এটাই। সন্ধান চাই ভাল বাসচালকের। গত তিন মাস ধরে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শ’দুয়েক চালক পাচ্ছে না নিগম।

কলকাতার তিনটি পরিবহণ নিগমকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার পরে প্রচুর নতুন বাস কেনার ভাবনা রয়েছে রাজ্য পরিবহণ নিগমের। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সাহায্যে বছর তিনেক আগে প্রায় সাড়ে ছ’শো নতুন বাস পেয়েছে রাজ্য। তার উপরে রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগেও শ’খানেক নতুন বাস কিনেছে। ওই সব বাস চালানোর জন্য নতুন চালক প্রয়োজন। কারণ, ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে চালকদের একটি বড় অংশ অবসর নিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গিয়েছে। চালকের কাজ করার সামর্থ্য তাঁদের ফুরিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন বাসচালক নিতে মরিয়া পরিবহণ দফতর। দফতর সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে শ’দুয়েক চালক এবং শ’চারেক কন্ডাক্টর নিতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। চুক্তি ভিত্তিক চাকরিতে বেতন মাসে ১১ হাজার টাকা।

কিন্তু নিতে চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন নিগমের কর্তারা। এক নিগম-কর্তার কথায়, ‘‘কন্ডাক্টর পেতে তেমন অসুবিধা নেই। কারণ কন্ডাক্টরের কাজ করতে তেমন প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু চালক হিসেবে তো আর যে কাউকে নেওয়া যায় না। ‘হেভি ভেহিক্যালস’ বা বাস-ট্রাক চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এমন ব্যক্তিকেই ওই কাজে নিযুক্ত করা যায়।’’

আরও পড়ুন: একটানা বৃষ্টিতে যানজট, ভোগান্তি

আর এখানেই সমস্যায় পড়েছেন নিগম-কর্তারা। চালকের পদের জন্য আবেদনকারীদের অধিকাংশেরই ‘হেভি ভেহিক্যালস লাইসেন্স’ নেই। নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণও নেওয়া নেই। ফলে তিন মাসের চেষ্টাতেও প্রয়োজনীয় চালকের সংখ্যা পূরণ করতে পারেনি পরিবহণ দফতর।

কেন পাওয়া যাচ্ছে না চালক?

ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আছে, এমন চালক না পাওয়ার কারণও বেশ অভিনব বলেই জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। কলকাতায় একটি মাত্র মোটর ট্রেনিং স্কুল রয়েছে, যেখানে ট্রাক এবং বাসের মতো ভারী এবং বড় গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর ওই স্কুলে একটিই বড় বাস ছিল, যাতে পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। কিন্তু বছর তিনেক আগে ১৫ বছর হয়ে যাওয়ার কারণে ওই বাসটি বাতিল করে দেয় পরিবহণ দফতর। বন্ধ হয়ে যায় প্রশিক্ষণও। সম্প্রতি ফের নতুন বাস কিনে প্রশিক্ষণ দেওয়া চালু করেছে স্কুলটি। কিন্তু বছর দুই প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় নতুন চালক তৈরি হওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে, গত দু’বছরে নতুন করে কলকাতায় বড় গাড়ি চালানোর লোক ক্রমশই কমেছে।

আরও একটি কারণ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ-কর্তারা। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওলা, উব্‌র বাজারে আসার পরে অ্যাপ-ক্যাব চালানোর চাহিদা বেড়েছে। কারণ তাতে বেতন ভালই মিলছে। ফলে, সরকারের ১১ হাজার টাকার চুক্তি ভিত্তিক চাকরি তাঁদের কাছে আর লোভনীয় নয়।’’

সব মিলিয়ে চালক খুঁজতে বেরিয়ে বেশ ফাঁপরে পরিবহণ-কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE