Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্রমিককে পেটানোয় বিক্ষোভ, চটকলে নামল র‌্যাফ

কিছু দিন আগে শ্রমিক-বিক্ষোভের মধ্যেই হুগলির একটি চটকলের ম্যানেজারকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। আর বালি চটকলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে অতিরিক্ত কাজ করতে না-চাওয়ায় পেটানো হল এক শ্রমিককে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠল মূলত তিন অফিসারের বিরুদ্ধে। বাড়তি সময় কাজ করতে নারাজ ওই শ্রমিক বাড়ি চলে যান। মঙ্গলবার কাজে যোগ দিতে এলে তাঁকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
Share: Save:

কিছু দিন আগে শ্রমিক-বিক্ষোভের মধ্যেই হুগলির একটি চটকলের ম্যানেজারকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। আর বালি চটকলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে অতিরিক্ত কাজ করতে না-চাওয়ায় পেটানো হল এক শ্রমিককে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠল মূলত তিন অফিসারের বিরুদ্ধে।

বাড়তি সময় কাজ করতে নারাজ ওই শ্রমিক বাড়ি চলে যান। মঙ্গলবার কাজে যোগ দিতে এলে তাঁকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। নামে র‌্যাফ-ও।

ঠিক কী ঘটেছিল?

পুলিশি সূত্রের খবর, ওই চটকলের ওয়ান্ডিং বিভাগের কর্মী রীতেশ পাণ্ডের সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়ে গেলেও তাঁকে অতিরিক্ত হিসেবে আরও এক ঘণ্টা কাজ করতে বলেন চটকল-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাড়তি ২০ মিনিট কাজ করার পরে তিনি বাড়ি চলে যান। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ রীতেশ ফের কাজে যোগ দিতে আসেন। অভিযোগ, রীতেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগের দিন অতিরিক্ত সময় কাজ না-করায় তাঁকে আর চাকরিতেই রাখা হবে না। তিনি যেন কারখানার গেটের বাইরে চলে যান। পুলিশ জানায়, রীতেশ এই নিয়ে চটকল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। সেই সময়েই চটকলের তিন অফিসার রীতেশকে ফেলে মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ।

রীতেশ বলেন, “তিন জনে মিলে আমাকে মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে হাত-পায়ে-পেটে লাথি মারতে থাকেন। ১০ বছর চাকরি করছি। কখনও এমন হয়নি।” রীতেশকে মারধর করতে দেখে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসেন। মারমুখী তিন অফিসার ঘরে ঢুকে পড়েন। এ দিনের ঘটনার ব্যাপারে চটকল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি। কারণ, কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করতে রাজিই হননি।

পুলিশ জানায়, রীতেশকে কেন মারধর করা হল, কেন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে, এই সব প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বালি থানার পুলিশকর্মীরা। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। শ্রমিকেরা দাবি তোলেন, অভিযুক্ত তিন অফিসারকে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে এবং তাঁদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

সম্প্রতি হুগলির চটকলে শ্রমিক-বিক্ষোভের জেরে ম্যানেজারকে পিটিয়ে খুনের ঘটনাকে ঘিরে সেখানকার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। বালিতে এ দিনের শ্রমিক-বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিশ্চিন্দা, বেলুড় থানা এবং হাওড়া কন্ট্রোল রুম থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী ও র‌্যাফ এনে ওই চটকলে মোতায়েন করা হয়। আনা হয় কাঁদানে গ্যাসও। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সিটি পুলিশের কর্তারা।

বিকেলে পুলিশি পাহারায় অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে রীতেশ এবং চটকলের এক অফিসারকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাড়া করে সব শ্রমিককে মিলের বাইরে বার করে দেয় পুলিশ। বন্ধ হয়ে যায় কাজকর্ম।

রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘জুট মিল থেকে ফোন পেয়ে হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শ্রমিকদের উপরে কেন অত্যাচার করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে নিশ্চয়ই খোঁজখবর নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE