ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে জিটি রোড ধরে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। আচমকাই পিছন থেকে তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল একটি মোটরবাইক। তাতে বসা দুই যুবক কিছু একটা দেখাল ওই ব্যক্তিকে। মন দিয়ে তা দেখতে দেখতেই ভদ্রলোক রাস্তায় টলে পড়ে গেলেন। আর হুশ করে চলে গেল মোটরবাইকটি।
রাস্তার উল্টো দিকে, দোকান ও ক্লাবে বসে থাকা কয়েক জন যুবক ওই দৃশ্য দেখে প্রথমে হকচকিয়ে যান। তার পরে ছুটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছেন ওই ব্যক্তি। সংজ্ঞা হারানোর আগে কোনও রকমে তিনি জানান, মোটরবাইকে থাকা দু’জন তাঁর নাকের সামনে পাউডারের মতো কিছু স্প্রে করে ৯০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দিয়েছে। বুধবার দুপুরে, বালির বাদামতলার ঘটনা।
ছিনতাই, লুঠপাট, ক্লোরোফর্ম শুঁকিয়ে অজ্ঞান করা বা বিভিন্ন কায়দায় কেপমারির ঘটনা নতুন নয়। তবে পাউডার জাতীয় স্প্রে দিয়ে কাউকে বেহুঁশ করে লুঠের ঘটনা বালিতে তো বটেই, কলকাতা কিংবা তার আশপাশেও সম্প্রতি ঘটেছে কি না, তা পুলিশ ও গোয়েন্দা অফিসারেরা মনে করতে পারছেন না। বালির ওই ঘটনায় চুরির মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সুনীল পট্টনায়ক নামে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তিকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যে ব্যাঙ্কের কাছে এই ঘটনাটি ঘটেছে, তার সামনে বসানো সিসিটিভি এবং জিটি রোডের উপরে থানার মোড় ও পুরসভার সামনে থাকা সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা সুনীলবাবু বালির মহাদেব চটকলের কর্মী। ওই চটকলের ক্যান্টিনও চালান তিনি। কাজের সূত্রে থাকেন বালি এলাকার ফকির পাঠক লেনে।
মেয়ের বিয়ের জন্য সম্প্রতি সুনীলবাবু প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ তিনি চটকল থেকে বেরিয়ে বাদামতলা এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে গিয়ে ওই ঋণের টাকার মধ্যে ৯০ হাজার টাকা তুলে ফের চটকলের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। ব্যাঙ্ক থেকে হাঁটাপথে চটকলের দূরত্ব মিনিট পাঁচেকের।
পুলিশকে সুনীলবাবু জানিয়েছেন, ওই মোটরবাইক আরোহীরা তাঁর পাশে থেমে প্রথমে একটি ঠিকানা বলে জানতে চায়, কী ভাবে সেখানে যেতে হবে। কিন্তু জায়গাটা ঠিক কোথায়, তা সুনীলবাবু বলতে না পারায় মোটরবাইক আরোহীরা তাঁর হাতে ঠিকানা লেখা একটি চিরকুট দেয়। সুনীলবাবুর অভিযোগ, ওই চিরকুটের লেখা তিনি যখন দেখছিলেন, আচমকাই তাঁর নাকের সামনে পাউডার জাতীয় কিছু স্প্রে করে এক বাইক-আরোহী। ওই তীব্র, কটু গন্ধ নাকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুনীলবাবুর মাথা ঘুরতে শুরু করে। তাঁর বক্তব্য, সেই অবস্থায় তিনি মোটরবাইকের পিছনে থাকা ব্যক্তির গায়ে টলে পড়েন।
সুনীলবাবুর দাবি, ওই ঘোরের মধ্যেই তিনি টের পান, ওই যুবক তাঁর ট্রাউজার্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে নগদ টাকা এবং বুকপকেট থেকে মোবাইলটি তুলে নিল। তিনি সেটা বুঝতে পারলেও পাউডার স্প্রে-র জেরে ঘোরের মধ্যে থাকায় বাধা দিতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য, মোটরবাইকে থাকা দুই যুবকের মুখই হেলমেটে ঢাকা ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সুনীলবাবু যে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ট্রাউজার্সের পকেটে ঢুকিয়ে বেরোচ্ছেন, সে খবর জানত ওই দুই যুবক। সেই সঙ্গে তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, ওই যুবকদের সুনীলবাবু চেনেন বলেই সম্ভবত তারা হেলমেটে মুখ ঢেকে এসেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy