জলের লাইন। কোনা এলাকায় ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।
বর্ষা এখনও বিদায় নেয়নি। পানীয় জলের উৎস গঙ্গার জলস্তরও যথেষ্ট উঁচুতে। কিন্তু এই সময়েও হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত সংযুক্ত এলাকা-সহ আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট। কোথাও জল পড়ছে সরু সুতোর মতো। কোথাও আবার জলই আসছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এলাকায় ঢুকলে প্রায়শই স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন পুর-প্রতিনিধিরা।
হাওড়া পুর এলাকার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে এত দিন ৪৪টি ওয়ার্ডে পানীয় জল সরবরাহ করা হত পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প থেকে। ওই প্রকল্পের জল গঙ্গা থেকে পাম্প করে এনে পরিস্রুত করে পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হত ওয়ার্ডগুলিতে। পুরসভা সূত্রে খবর, ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে বিভিন্ন পাম্পহাউস থেকে জল সরবরাহ করত কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি (কেএমডব্লিউএসএ)। অভিযোগ, তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। গত ডিসেম্বরে পুর নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে তৃণমূল বোর্ড দখল করার পরে ঘোষণা করা হয়, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫০টি ওয়ার্ডেই পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প থেকে পরিস্রুত পানীয় জল সরবহার করা হবে। আরও ঠিক হয়, দাশনগরের কাশীপুরে তৈরি হওয়া ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে সব ওয়ার্ডে জল দেওয়া হবে।
কিন্তু অভিযোগ, ঘোষণাই সার। পুরবোর্ড গঠন করার পরে আট মাস পেরিয়ে গেলেও কাশীপুর জলাধারের কাজ শেষ হয়নি। ফলে জলও পৌঁছয়নি ওই সব এলাকায়। এ নিয়ে এলাকার মানুষও ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি জলসঙ্কট নিয়ে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডল এলাকার বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখেও পড়েন।
এলাকার জলসঙ্কটের কথা স্বীকার করে ওই কাউন্সিলর বলেন, “মানুষকে জল দিতে না পারলে এ বার আমরা আক্রান্ত হব। আমি তাই এলাকায় তিনটি গভীর নলকূপ বসিয়ে জল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
কিন্তু কেন এই সঙ্কট? কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুরকর্তারা পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের প্রধান বা মেন পাইপলাইন সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়াকেই মূলত দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সাড়ে পাঁচ ফুট ব্যাসের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পাইপের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় মরচে পড়ে এতটাই ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে যে উচ্চ চাপে জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কারণ যে কোনও সময় জলের চাপে পাইপের একটা বড় অংশ ফেটে যেতে পারে। যার জেরে মারাত্মক বিপদের মুখে পড়তে পারেন শহরের মানুষ। গোটা শহর প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। প্রাণহানিও হতে পারে। এর থেকে মুক্তির উপায় হল বিকল্প পাইপলাইনের ব্যবস্থা করা।
হাওড়া পুরসভার জল এবং জলসম্পদ দফতরের মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “প্রধান পাইপের অবস্থা এতটাই খারাপ যে পদ্মপুকুর প্রকল্পের জলাধারে পর্যাপ্ত জল থাকলেও উচ্চ চাপে জল ওই পাইপলাইনে পাঠানো যাচ্ছে না। চাপ বাড়ালেই ফাটল ধরছে। এ জন্য কাশীপুর জলাধারও চালু করা যাচ্ছে না। ফলে বহু এলাকায় জল পৌঁছচ্ছে না। জলের হাহাকার দেখা দিচ্ছে।”
পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই পুরসভা সাড়ে পাঁচ ফুট ব্যাসের মেন লাইনের পাশে আর একটি পাইপ লাইন বসানোর পরিকল্পনা করেছে। পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “পদ্মপুকুরের মেন লাইনের যা অবস্থা তাতে আর কাজ চলছে না। এ জন্য আর একটি পাইপ পাশেই বসানো হবে। যেহেতু এটা খুবই খরচ ও সময় সাপেক্ষ তাই পর্যায়ক্রমে এই কাজ করা হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডারও ডাকা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy