Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অর্ধাহারেই দিন কাটছে, এখনও অমিল সরকারি ত্রাণ

হাঁটু পর্যন্ত কাদা ঘেঁটে মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েতের কচুবেড়িয়া গ্রামে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ঘিরে ধরলেন গ্রামবাসীরা। উগরে দিলেন এতদিনের জমিয়ে রাখা ক্ষোভ। জানালেন, কারওরই গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে ভরপেট খাওয়া জোটেনি। পরণের কাপড়টুকু ভরসা করে দিন-রাত কাটছে। মাটির বাড়ি ধসে যাওয়ায় নদীবাঁধের উপরে তাঁবু খাটিয়ে চলছে বসবাস।

শিবনাথ মাইতি
সাগর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০২:২১
Share: Save:

হাঁটু পর্যন্ত কাদা ঘেঁটে মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েতের কচুবেড়িয়া গ্রামে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ঘিরে ধরলেন গ্রামবাসীরা। উগরে দিলেন এতদিনের জমিয়ে রাখা ক্ষোভ। জানালেন, কারওরই গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে ভরপেট খাওয়া জোটেনি। পরণের কাপড়টুকু ভরসা করে দিন-রাত কাটছে। মাটির বাড়ি ধসে যাওয়ায় নদীবাঁধের উপরে তাঁবু খাটিয়ে চলছে বসবাস।

এই রকমই এক তাঁবুতে উঁকি মেরে দেখা গেল, একদিকে বাঁধা রয়েছে গরু-ছাগল। অন্য দিকে, মাদুর পেতে শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধা। তাঁর পাশে ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে। বৃদ্ধা জানালেন, বন্যার পরে সপ্তাহ খানেক কাটতে চললেও দেখা মেলেনি শাসকদলের কোনও নেতা-নেত্রীর। মেলেনি সরকারি ত্রাণ। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ, নোনাজলে এলাকার নলকূপগুলি ডুবে যাওয়ায় পানীয় জলেরও তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নলবাহিত জল অবশ্য কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে ফের চালু হয়েছে। কিন্তু তাতে নোনা জল মিশে যাওয়ায়, সে জল এতোই বিস্বাদ যে মুখে তোলা যাচ্ছে না। এ দিকে, পাঁচ-ছ’দিন ধরে জল জমে থাকায় ঘাসপাতা, মরা জীবজন্তু পচতে শুরু করেছে। দুগর্ন্ধে বমি আসার জোগাড়। বাড়ছে সংক্রামক রোগের প্রকোপও।

ভরা কোটালে নদীবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে নোনাজল ঢুকতে পারে, এই আশঙ্কা ছিলই। যে কারণে পঞ্চায়েতের তরফে নদীবাঁধ সারানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু কাজ পুরোপুরি হওয়ার আগেই গত রবিবার নেমে আসে বিপর্যয়।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বছর বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাগর ব্লকের মুড়িগঙ্গা ১ ও ঘোড়ামারা পঞ্চায়েত। মুড়িগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের কচুবেড়িয়া, শীলপাড়া, পাখিরালা, হেন্দলকেটকি, পাথরপ্রতিমা, মুড়িগঙ্গা গ্রামগুলিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তুলনায় বেশি। মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, প্রায় ৭২০০ বিঘা চাষজমি, ৫ হাজারেরও বেশি পানের বরজ ও হাজার তিনেক মাছের পুকুর নোনা জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘরছাড়া প্রায় তিন হাজার পরিবার। তার মধ্যে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় দু’হাজার বন্যাপীড়িত মানুষ।

স্থানীয় মানুষের অবশ্য অভিযোগ, নদীবাঁধে বা উঁচু জায়গায় যাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের কাছে সরকারি ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না। ত্রাণশিবিরের অবস্থাও তথৈবচ। স্থানীয় ক্লাব, মজদুর সংগঠন, বাজার সমিতির দেওয়া মুড়ি-বাতাসা খেয়ে কোনও রকমে খিদে সামাল দেওয়া যাচ্ছে। রাধারানি প্রামাণিক, অনিল পাত্র, সঞ্জয় মণ্ডল, তরুণ দাসের মতো বহু ক্ষতিগ্রস্তের মুখে শোনা গেল একই আক্ষেপ। যদিও সাগরের বিডিও পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। তবে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিলে তবেই তা মিলছে।” সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরাও বলেন, “ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। জল নামলে নদীবাঁধ তৈরির কাজ শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

government relief sagar sibnath maiti southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE