Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চা খেয়ে বাড়ির গাড়িতেই লুঠের মাল নিয়ে চম্পট ডাকাতদের

মাঝরাতে লুঠপাট চালিয়ে একটু জিরোতে বসেছে ডাকাতেরা। সামনে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন গৃহকর্তা। মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে তাঁর। আর ফ্যাকাশে মুখে ডাকাতদের জন্য চায়ের কাপ নিয়ে আসছেন গৃহকর্ত্রী! সেই চা খেতে খেতে গৃহকর্তার সঙ্গে কিছুক্ষণ খোশগল্পও করল ডাকাতেরা। তার পরে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে বলল, “গাড়ির চাবিটা দিন। এই সব লুঠের মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতে হবে তো!”

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

মাঝরাতে লুঠপাট চালিয়ে একটু জিরোতে বসেছে ডাকাতেরা। সামনে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন গৃহকর্তা। মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে তাঁর। আর ফ্যাকাশে মুখে ডাকাতদের জন্য চায়ের কাপ নিয়ে আসছেন গৃহকর্ত্রী!

সেই চা খেতে খেতে গৃহকর্তার সঙ্গে কিছুক্ষণ খোশগল্পও করল ডাকাতেরা। তার পরে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে বলল, “গাড়ির চাবিটা দিন। এই সব লুঠের মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতে হবে তো!” বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে সাধের গাড়ির চাবিটা হাতে তুলে দিলেন গৃহকর্তা। সেই গাড়িতেই লুঠের মালপত্র চাপিয়ে চম্পট দিল ডাকাতেরা!

শনিবার রাতে এমনই ডাকাতির অভিজ্ঞতা হয়েছে টিটাগড়ের বিড়লা গেটের তিওয়ারি পরিবারের। তাঁদের অভিযোগ, সাত-আট জনের দলটি নগদ ২০ হাজার টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে এমন ডাকাতির ঘটনায় তাজ্জব অনেকেই। কারণ, চুরি করতে এসে আম-দুধ-চকোলেট খাওয়ার ঘটনা শুনলেও এমন ডাকাতির কথা সচরাচর শোনা যায় না।

কী হয়েছিল ওই রাতে?

পুলিশ জানায়, গৃহকর্তা নিত্যানন্দ তিওয়ারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। আড়াইটে নাগাদ খুটখাট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিত্যানন্দবাবুর। তিনি জানান, চোখ মেলে দেখেন ঘরে সাত জন যুবক। প্রত্যেকের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। চাপা গলায় এক জন বলে ওঠে, “একদম আওয়াজ করবি না, যা আছে জিনিসপত্র বার কর।” নিত্যানন্দবাবুর অভিযোগ, আটকানোর চেষ্টা করলে এক জন ওয়ান শটার পিস্তলের বাঁট দিয়ে তাঁর মাথায় বাড়ি মারে। মাথা ফেটে যায় তাঁর। এর পর আর প্রতিবাদ না করে আলমারির চাবি দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দেন তিনি।

নিত্যানন্দবাবু জানান, আলমারি খুলে দুষ্কৃতীরা টাকা-গয়না হাতিয়ে নেয়। এর পরেই গৃহকর্ত্রীকে হুকুম করে, “একটু চা করে আনো তো!” বিপদ বুঝে স্ত্রীকে তা-ই করতে বলেন নিত্যানন্দবাবুও। ততক্ষণে শোকেস খুলে কাপ-প্লেট নিয়ে এসেছে ডাকাতেরাই।

পুলিশ সূত্রের খবর, চা তৈরির ফাঁকে ডাকাতেরা নিত্যানন্দবাবুর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়। নিত্যানন্দবাবু কোথায় চাকরি করেন, কত দিন ওই পাড়ায় আছেন এই সব। ইতিমধ্যেই চা নিয়ে আসেন নিত্যানন্দবাবুর স্ত্রী। আয়েস করে সেই চা খায় ডাকাতেরা। তার পরে নিত্যানন্দবাবুর গাড়ি নিয়েই পালায়। পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতির খবর যাতে তড়িঘড়ি পুলিশের কাছে না পৌঁছয়, তার জন্য পালানোর আগে ওই দম্পতির মোবাইলও নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

রবিবার সকালে নিত্যানন্দবাবুর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা জানতে পারেন এলাকাবাসীরা। ঘটনাস্থলে যায় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বিশাল পুলিশবাহিনী। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, রাত আড়াইটে নাগাদ প্রথমে পাঁচিলের লোহার গেটের তালা, তার পরে বারান্দায় গ্রিলের কোল্যাপসিব্ল গেটের তালা এবং শেষে সদর দরজার তালা ভেঙে নিত্যানন্দবাবুর ঘরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। তালা ভাঙার ধরন দেখে পুলিশের অনুমান, রড জাতীয় কিছু দিয়ে সেগুলি ভাঙা হয়েছিল। কিন্তু গভীর রাত হওয়ায় সম্ভবত প্রতিবেশীরা কোনও আওয়াজ পাননি। পুলিশের আরও অনুমান, স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে খবর নিয়েই এই ডাকাতির ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বাইরের দুষ্কৃতীরাও এই ডাকাতিতে যুক্ত থাকতে পারে।

যদিও এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, এতক্ষণ ধরে তালা ও কোল্যাপসিবল গেট ভাঙা হলেও টহলদার পুলিশ বা নাইটগার্ডের দেখা মেলেনি। বস্তুত, এমন ঘটনার পরে অভিযুক্তদের তড়িঘড়ি গ্রেফতার করতে না পারলেও বিস্ময় প্রকাশ করেই দায় সারছেন পুলিশকর্তারা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে চুরি-ডাকাতি যে স্বাভাবিক ঘটনা, তা-ও কার্যত স্বীকার করেছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর। তিনি বলেন, “ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বাড়িতে ঢুকে লুঠপাটের ঘটনা খুব একটা বিরল নয়। কিন্তু এ ভাবে ডাকাতি করে চা খেয়ে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেওয়ার ঘটনাটা অভিনব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE