Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদা না দেওয়ায় পুজোর খাবারেও ‘আমরা-ওরা’

চাঁদা দিতে না পারায় সরস্বতী পুজোর খাওয়া-দাওয়াও জুটল না। শুকনো মুখে ফিরতে হল দুই বোনকে। ভিক্ষে করে কোনও মতে মেয়েদের পড়াশোনা চালাতেই তাদের মায়ের নাভিঃশ্বাস ওঠে। স্কুলের চাহিদা মতো চাঁদা দিতে পারেনি দু’বোন।

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

চাঁদা দিতে না পারায় সরস্বতী পুজোর খাওয়া-দাওয়াও জুটল না।

শুকনো মুখে ফিরতে হল দুই বোনকে। ভিক্ষে করে কোনও মতে মেয়েদের পড়াশোনা চালাতেই তাদের মায়ের নাভিঃশ্বাস ওঠে। স্কুলের চাহিদা মতো চাঁদা দিতে পারেনি দু’বোন।

শুধু তারা দু’জনই নয়। শনিবার মন্দিরবাজারের সারদেশ্বরী বিদ্যামন্দিরে চাঁদা না দিতে পারা ছাত্রীদের সকলকেই একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ। আগামী ২৮ জানুয়ারি এর প্রতিবাদে সভা ডেকে প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তফসিলি অধ্যুষিত ওই এলাকার স্কুলটিতে ছাত্রী সংখ্যা ৭৯৬ জন। এ বছর পরিচালন সমিতির সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়, সরস্বতী পুজোয় ছাত্রীদের ফ্রায়েড রাইস, আলুর দম, চাটনি ও পাঁপড় খেতে দেওয়া হবে। সেই বাবদ পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের ৪০ টাকা এবং সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। যারা টাকা দিতে পারেনি, তারা খাবারের কুপনও পায়নি।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে স্কুলে বেঞ্চ পেতে যখন ছাত্রীদের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, তখন কুপন না থাকা ছাত্রীদের কার্যত শিক্ষিকাদের বকুনি খেয়ে স্কুল প্রাঙ্গণ ছাড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিভাবকদেরও শুকনো মুখে মেয়েদের নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে। রবিবার দুপুরে ওই এলাকার মল্লিকপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেই তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিলেন। তাদের পরিবারের মেয়েরাও খাবার পায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলে, “সকাল সকাল সেজেগুজে না খেয়েই অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলাম স্কুলে। এ দিকে চাঁদা দিতে পারিনি বলে খেতে যাওয়ার সময়ে আমাদের আটকে দেওয়া হয়। অনেক কাকুতি মিনতি করলে, খাবার বেশি হলে সব শেষে দেখা যাবে বলে দিদিমণিরা সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।” স্কুলে খাবে বলে বাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা ছিল না দু’জনের। শিক্ষিকাদের কথা মতো তারা বিকেল ৩টে পর্যন্ত অপেক্ষা করে তবে খেতে বসার সুযোগ পায়। অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, সেশন ফি-র সঙ্গে পুজোর খরচ বাবদও টাকা ধরা থাকে। সে ক্ষেত্রে বাড়তি চাঁদা নেওয়াই বা হবে কেন?

অভিভাবকদের অনেকের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশেই তাঁদের মেয়েদের খেতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা বলেন, “এর প্রতিবাদ করলে উল্টে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, যা পারি করে নিতে। বাধ্য হয়ে আমাদের অনেককে অপমানে কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে ফিরতে হয়েছে।” ঘটনার প্রতিকার চেয়ে অভিভাবকদের নিয়ে সভা করতে এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছিল। পুলিশ এসে অবশ্য মাইক বন্ধ করে দেয়। ফের সভার প্রস্তুতি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ওই অভিভাবকেরা। পুলিশের দাবি, অনুমতি ছাড়াই প্রচার চলছিল।

ছাত্রীদের খেতে না দেওয়ার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই প্রধান শিক্ষিকা রঞ্জিতা মণ্ডল দাবি করেন, “ওরা মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে। স্কুলে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে এ ধরনের কুৎসা রটানো হতে পারে। তবে কোন পক্ষ এ সব করছে তা বলতে পারব না।” জেলা স্কুল পরিদর্শক মৃন্ময় বসু বলেন, “কোনও ছাত্রী চাঁদা দেয়নি বলে খেতে দেবে না, এটা হতে পারে না। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal dilip naskar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE