শোরগোল: বাঁ দিকে, মাইক বেঁধে হল প্রতিযোগিতা। ডান দিকে, তখনও চলছে পরীক্ষা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
স্কুলের চৌহদ্দিতে বিশাল মাঠ। সেখানে গমগম করে বাজছে মাইক। মাঠে চলছে কয়েকশো বাচ্চার আলু দৌড়, হাঁড়ি ভাঙা, জিমন্যাস্টিক্স, লং জাম্প। স্কুলের ভিতরে তখন চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট।
ঘটনাস্থল হালিশহরের মল্লিকবাগ হাইস্কুল। মঙ্গলবার সেটিরই সামনের মাঠে ছিল হালিশহর প্রাথমিক স্কুল সার্কেলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ‘হিট’। তাতে অংশ নেয় ১৪টি প্রাথমিক স্কুল। সব মিলিয়ে কয়েকশো ছাত্রছাত্রী। তাদের হইচই আর মাইকের আওয়াজে টেস্ট পরীক্ষার দফারফা হওয়ার জোগাড়। প্রাথমিক শিক্ষকদের এই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অম্বর মিত্র সহ বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ক্ষুব্ধ অভিভাবক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও।
স্কুল সূত্রের খবর, এ দিন ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক টেস্টের ইংরেজি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ৫০০। মাঠের গা ঘেঁষে অধিকাংশ ক্লাসঘর। শিক্ষকদের অভিযোগ, সকাল থেকেই স্কুলের দিকে মুখ করে মাঠের গোলপোস্টে বাঁধা হয়েছিল চোঙা। তাতে বিভিন্ন খেলার ঘোষণা আর জয়ীদের নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের কথা পরীক্ষার্থীদের কানে যাওয়ায় তাদের মন ছিল মাঠের দিকেই। এ দিন ‘হিট’-এর পরে আগামী ২৫ নভেম্বর ওই মাঠেই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
অম্বরবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওঁরা জানেন টেস্ট চলছে। স্কুলের মাঠ হওয়া সত্ত্বেও কোনও প্রথাগত অনুমতি নেননি প্রাথমিক শিক্ষকেরা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সোমবার সাদা কাগজে এক জন একটি চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও সই বা স্ট্যাম্প ছিল না। এ ভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়?’’
পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরাও। বাণীব্রত মণ্ডল, সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়রা হালিশহরের সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক।
তাঁদের দাবি, ‘হিট’-এর তারিখ এবং স্থান কলকাতা থেকে ঠিক করেছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু করণীয় নেই। বাণীব্রতবাবু বলেন, ‘‘মানছি অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু আমরা কী করব? সংসদ দিন ঠিক করে দিয়েছে। না হলে তো ছুটির দিনেই করা যেত। তা ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ আপত্তি করার আগেই আমরা মাইক বন্ধ করে দিই।’’ ব্যারাকপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দীপঙ্কর রায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান অংশুমান রায় বলেন, ‘‘একদমই উচিত কাজ হয়নি। আমি বারণ করেছিলাম ওখানে স্পোর্টস করতে। তা-ও কেন হল? ভবিষ্যতে এমন যাতে না হয়, দেখব।’’
প্রাথমির শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, স্পোর্টস করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কুলের কাছ থেকে নো-অবজেকশন শংসাপত্র নিতে হবে। পাশাপাশি, স্কুলের দিন বাদ দিয়ে ছুটির দিনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মল্লিকবাগ হাইস্কুলের অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। অবিলম্বে হালিশহর সার্কেলের কাছে রিপোর্ট তলব করা হবে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক)-কেও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy