Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় খুনের ‘সুপারি’ জলে গেল কমলেশের

ধৃতের নাম কমলেশ পাত্র। বুধবার রাতে তাঁর দাদা সমীরণকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। অল্পের জন্য রক্ষা পান সমীরণবাবু।

ধৃত: কমলেশ পাত্র। নিজস্ব চিত্র

ধৃত: কমলেশ পাত্র। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

সম্পত্তির লোভে দাদাকে খুনের জন্য ভাড়াটে খুনিদের লক্ষাধিক টাকার সুপারি দিয়েছিলেন ভাই। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দাদাও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ভাই।

পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম কমলেশ পাত্র। বুধবার রাতে তাঁর দাদা সমীরণকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। অল্পের জন্য রক্ষা পান সমীরণবাবু। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁর ভাই কমলেশ পাত্রকে। পুলিশের দাবি, জেরায় কমলেশ স্বীকার করেছেন, দাদাকে খুনের জন্য দুষ্কৃতীদের ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তবে অতিরিক্ত মদ খাওয়ায় নিশানা ভুল হয়। গুরুতর জখম হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন সমীরণ। মিনাখাঁর কচুরহুলো গ্রামের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ী বর্তমানে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে হাড়োয়ার শ্যামলা বাজার থেকে মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন সমীরণবাবু। গা়ড়ি-জমি কেনাবেটার ব্যবসা আছে তাঁর। দুষ্কৃতীরা পথ আটকায় তাঁর। রিভলভারের বাঁটের আঘাতে মাথা ফাটে সমীরণের। ৩ রাউন্ড গুলিও চালায় দুষ্কৃতীরা। একটি গুলি বুকের ডান দিকে, একটি পায়ে এবং একটি লক্ষ ভ্রষ্ট হয়। সমীরণবাবুকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

যৌথ তদন্তে নামে মিনাখাঁ ও হাড়োয়া থানার পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, দাদা সমীরণের পিছু পিছু অন্য একটি মোটর বাইকে আসছিলেন ছোট ভাই কমলেশ-সহ দু’জন। দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়ে পালানোর পরেও কমলেশ দাদার খোঁজ না নিয়ে বাড়ি ফিরে ঘরে শুয়ে পড়েন।

জখম সমীরণ পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা তাঁকে ঘিরে ধরলে সঙ্গে থাকা কয়েক হাজার টাকা, মোটর বাইক দিতে চেয়েছিলেন তিনি। উল্টে দুষ্কৃতীরা বলে, ‘টাকা যখন নিয়েছি তখন খুন করবই।’ এই কথায় সন্দেহ দানা বাঁধে তদন্তকারীদের। নিছক ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসেনি দুষ্কৃতীরা। আরও একটি বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সমীরণের বিশেষ পরিচিত কেউই খুনের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত।

জেরার মুখে কমলেশের কথা অসংলগ্ন ঠেকে পুলিশের। তাঁকে আটক করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, জেরার মুখে ভেঙে পড়েন কমলেশ। জানান, সম্পত্তির দখলদারি থেকে দাদা সরিয়ে দিতেই হাড়োয়ার দাগি দুই ভাড়াটে খু‌নিকে ‘সুপারি’ দিয়েছিলেন তিনি। ৭০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। কমলেশের দাবি, জুয়া এবং লটারির পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট করেছেন দাদা। আরও ৫-৬ লক্ষ টাকা চেয়ে বাবা ও তাঁকে সমীরণ খুনের হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ কমলেশের। এ সব কারণেই দাদাকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষেন কমলেশ।

ধৃত ব্যক্তি পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, প্রচুর সম্পত্তি পেতে চলেছেন বুঝে বড়সড় টাকা চেয়ে বসে ভাড়াটে খুনিরা। ২ লক্ষ টাকার সেই দাবি নিয়ে বিস্তর দরাদরির পরে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় রফা হয়। ঘটনার রাতে দাদাকে চিনিয়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরেন কমলেশ। এলাকা ছাড়ার আগে ‘জরুরি দরকার’ বলে দাদার মোবাইলটিও নিয়ে নেন তিনি। পিছন থেকে গুলির শব্দে ধরে নেন, দাদার মৃত্যু হয়েছে। এরপরে বাড়ি ফিরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন।

ভাড়াটে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। কমলেশকে শুক্রবার বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kamlesh Patra miscreants Brother Murder Attempt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE