কাটোয়ায় ভাগীরথীর ভাঙন। ফাইল চিত্র।
ভোটের ময়দানে একে অপরের সঙ্গে যতই লড়াই, আকচা-আকচি থাক না কেন ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বেলায় সব দলেরই এক সুর।
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে চারটিরই একটা বড় সমস্যা ভাগীরথীর ভাঙন। সঙ্গে রয়েছে ব্যন্ডেল-কাটোয়া ডবল লাইনের কাজ থমকে যাওয়া। এ বারের লোকসভা ভোটে সব দলের প্রার্থীরাই ওই দুই সমস্যাকে হাতিয়ার করেই প্রচার চালাচ্ছেন। কেউ প্রচারপত্রে লিখে, কেউ বা মাস্টার প্ল্যান করে ভাঙন রোধের আশ্বাস দিয়ে ভোটচারদের মন জয়ে করতে চাইছেন।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহর, কালনা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ভাগীরথীর ভাঙনে আক্রান্ত। যার মধ্যে রাজ্যের ভাঙন-মানচিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ থেকে পূর্বস্থলীর তামাঘাটা। ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই ভোট আসলে ভাঙন রোধের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন সমস্ত রাজনৈতির দলের প্রার্থীরা। কিন্তু ভোট ফুরোলেই যে কে সেই। এ বিষয়ে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের সঙ্গে একমত পাশের বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থীরাও।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ফরাক্কায় গঙ্গার উপরে সেতু তৈরির পর থেকেই ভাঙন ব্যাপক হারে বেড়েছে। একরের পর একর জমি, কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর তো বটেই, ভাঙনের চোটে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। এমনকী বছর খানেক আগে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচার জন্য কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েতের চরবিষ্ণুপুর গ্রামকে স্থানান্তর করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাঝেমধ্যে বড় বড় বোল্ডার বা বাঁশের খাঁচা ফেলা হয়। তবে ওই পর্যন্তই। তাতে ভাঙন রোধ না হলেও ঠিকাদাররা লাভবান হন বলেও বাসিন্দাদের দাবি।
এলাকায় ঘুরে দেথা গিয়েছে, কংগ্রেস-তৃণমূল ও বিজেপি রীতিমত লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে গঙ্গা ভাঙন রোধের আশ্বাস দিয়েছেন। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী চন্দনা মাঝি বলেন, “পরিকল্পনাহীন ভাবে ভাঙন রোধের কাজ হওয়ায় এই এলাকার মানুষের সমস্যা মেটেনি। আমরা মাস্টার প্লান তৈরি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করতে চাই।” কংগ্রেসের দাবি, কেন্দ্রে জলসম্পদ মন্ত্রী সৈফুদ্দিন সোজ থাকাকালীন তাঁরা কাটোয়া-কালনায় ভাঙন রোধের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিগত বাম সরকার ও বর্তমান তৃণমূল সরকারের উদাসীনতায় ভাঙন রোধের মাস্টার প্লান তৈরি হয়নি। সিপিএমের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দায়ের দাবি, “আমরা ভাঙন রোধে রীতিমত গুরুত্ব দিয়েছি। বিগত বাম সরকার বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে। ভাঙন রোধের দাবিতে আমরা সবসময় সরব। সংসদেও বিষয়টি তুলে ধরব।” তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডলও বাড়ি বাড়ি চিঠি বিলি করে গঙ্গা ভাঙন রোধ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায়ও একই পথে হাঁটছেন। প্রচার পত্রে ভাঙন-রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকায় কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল কিছুই করেনি। আমরা ক্ষমতায় এলে ভাঙন রোধ করব।”
বারবার ভাঙনের ফিরে আসার মতো প্রার্থীদের কথাতে ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যান্ডেল-কাটোয়া ডবল লাইনের প্রসঙ্গও। সব রাজনৈতিক দলই ওই লাইনকে সিঙ্গল থেকে ডবল করার কাজ দ্রুত করার জন্য তাঁদের সাংসদ রেল দফতরের উপর চাপ তৈরি করবে বলে দাবি করেছেন। এমনিতে ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনের মধ্যে ব্যান্ডেল থেকে কালনা পর্যন্ত ডবল লাইন চালু হয়ে গিয়েছে। বাকি কাটোয়া পর্যন্ত রেল লাইনকে তিনটি ধাপে ভাগ করেছে রেল দফতর। তার মধ্যে কাটোয়া-পাটুলি অংশে কাটোয়া-দাঁইহাট সাত কিলোমিটার রেল পথ দিয়ে ট্রেন যাতায়াতও শুরু হয়েছে।
এখন দেখা যাক, এই ভোটে ভাঙন বিধ্বস্তদের জীবনচরিত বদলায় কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy