Advertisement
১০ মে ২০২৪

জলের সমস্যা মেটাতে অবৈধ সংযোগে কোপ

পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে শহর জুড়ে বেআইনি জলের সংযোগ ছিন্ন করায় উদ্যোগী হল পুরসভা। বৃহস্পতিবার থেকেই সেই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও পুরকর্মীরা জানাচ্ছেন।

অনেক এলাকার বাসিন্দাদেরই জল আনতে হচ্ছে বহু দূর থেকে।  —নিজস্ব চিত্র।

অনেক এলাকার বাসিন্দাদেরই জল আনতে হচ্ছে বহু দূর থেকে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৩
Share: Save:

পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে শহর জুড়ে বেআইনি জলের সংযোগ ছিন্ন করায় উদ্যোগী হল পুরসভা। বৃহস্পতিবার থেকেই সেই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও পুরকর্মীরা জানাচ্ছেন। এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগও করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার দাবি, অবৈধ সংযোগগুলি বন্ধ করা গেলে জলের সমস্যা অনেকটাই মিটবে।

আসানসোল পুর এলাকায় প্রতিদিন আট কোটি লিটার জল সরবরাহ করা হয়। পুর কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, যে হারে গরম বাড়ছে তাতে আর খুব বেশি দিন এই পরিমাণ জল সরবরাহ করা যাবে না। কারণ, মাইথন ও পাঞ্চেতের জলস্তর বেশ নীচে নেমে যাওয়ায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এই দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে, দামোদরের জলস্তরও অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল উঠছে না।

এই পরিস্থিতিতে শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবৈধ জলের সংযোগ ছিন্ন করা শুরু হয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদমারি এলাকায় কিছু বাসিন্দার বাধার মুখে পড়েছিলেন পুরকর্মীরা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ করেছে পুরসভা। জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়ের দাবি, শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় অবৈধ জলের সংযোগের ফলে অনেক জল অপচয় হচ্ছে। কোথাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল সরবরাহ করতে হচ্ছে। আবার, কোনও এলাকার বাসিন্দারা সামান্য জলও পাচ্ছেন না।

একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে পূর্ণশশীবাবু জানান, সম্প্রতি আসানসোলের নানা অঞ্চলে ৫৫২টি বহুতলে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, মাত্র ২৪৬টিতে জলের বৈধ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। ৩০৬টি বহুতলের প্রায় সাড়ে সাত হাজার পরিবার অবৈধ উপায়ে নেওয়া সংযোগের জল ব্যবহার করছেন। পূর্ণশশীবাবু জানান, এই পরিবারগুলিকে এত দিনের বকেয়া মিটিয়ে জলের বৈধ সংযোগ নেওয়ার নোটিস পাঠানো হয়েছে। তাঁর দাবি, অবৈধ সংযোগ নেওয়ায় শুধুমাত্র জলের অপচয়ই হচ্ছে না, পুরসভা প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্বও হারাচ্ছে।

জলের অবৈধ সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু বাসিন্দাদের একাংশ নন, শহরের বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও চুরি করে জল ব্যবহার করছে বলে মেয়র পারিষদ পূর্ণশশীবাবুর দাবি। তিনি জানান, পুরকর্মীরা সবিস্তার সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, শহরের প্রচুর হোটেল, খাবারের দোকান, এমনকী বেশ কিছু কারখানায় যে জলের রয়েছে, তা বেআইনি। আসানসোল শহর, কুলটির জিটি রোড লাগোয়া অঞ্চল, চিত্তরঞ্জন রোডের কাছে একাধিক ইটভাটা, জামুড়িয়ার শিল্পতালুক-সহ বেশ কিছু অঞ্চলে এই বেনিয়ম চলছে। এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির অবৈধ সংযোগ ছিন্ন করা হোক। পুরসভার আধিকারিক বলেন, ‘‘পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিক বার এই উদ্যোগ হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করে ফিরে আসতে হয়েছে।’’

যদিও মেয়র পারিষদ পূর্ণশশীবাবুর বক্তব্য, ‘‘জল নিয়ে কোনও রাজনীতি হবেনা। সমস্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করার জন্য অবৈধ জলের সংযোগ ছিন্ন করা হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

drinking water illegal connection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE