কাটোয়া কলেজ রোড। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
টানা বৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জেলায়।
বুধবার বিকেল থেকে জেলার বিভিন্ন নদীর জল বিপজ্জনক ভাবে বাড়তে শুরু করেছে। জল না মানতে পারায় প্রায় ৫০টি গ্রাম জলমগ্ন। কুনুর নদীর জল উপচে ডুবেছে গুসকরা শহরের কিছু অংশ। বেশ কিছু এলাকা ঘুরে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “এখনও কোনও নদীর জল বিপদসীমা পেরোয়নি। তবে জেলা থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত সবাইকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা ও সেচ দফতরের কর্মীদের এখন আর ছুটি দেওয়া যাবে না।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান শহরের কাছে দামোদরের জল প্রাথমিক বিপদসীমার অনেকটা নীচে। তবে কাটোয়ার কাছে অজয় ও ভাগীরথীর জল প্রাথমিক বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “টানা বৃষ্টি হলে অবস্থা বদলাতে পারে। সেচ দফতরের বাঁধ ঠিক রয়েছে। মঙ্গলকোটে পুরনো জমিদারি বাঁধে সমস্যা হয়েছিল তা মেরামত করা হয়েছে।” জামালপুরে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল ঢোকা আটকাতে কাজ করছে হুগলি সেচ দফতর। জামালপুরের অমরপুরেও বাঁধ উঁচু করছে জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, এ দিন বিকেলে বর্ধমানের কাছে দামোদর দিয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কিউসেক জল গিয়েছে। বিপদসঙ্কেত জারি করেছে প্রশাসন। রায়না ২ ব্লকের দামোদরের ধারে বড় বৈনান, গোতান পঞ্চায়েত এলাকার ১৮টি গ্রাম জলমগ্ন। দারকেশ্বর নদীর পাড়ে থাকা ওই ব্লকের উচালনের ৭টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিবির করে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনসার আলি বলেন, “পরিস্থিতি খারাপ। আমরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাসিন্দাদের উদ্ধার করছি।”
কুনুরের জল বাড়ায় গুসকরা শহরের একাংশে জল ঢুকতে শুরু করেছে। জলবন্দি শহরের শান্তিপুর, রটন্তী, বিহারীপাড়া এলাকা। বেহুলা নদী ও ডিভিসি সেচখালের জল উপচে মেমারির দেঁহা-সহ বেশ কিছু গ্রামও জলমগ্ন।
এ দিন নদীবাঁধ সংস্কারের দাবিতে ফাগুপুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন বাসিন্দারা। বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী রজক ও জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
কাটোয়ায় প্রায় ৯৬৫০ হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা আশিস বারুই জানান, ১৭০ হেক্টর পাট ও ৫৯৫ হেক্টর আনাজের খেত ডুবেছে। কাটোয়া ২ ব্লকের চন্দ্রপুরে, অগ্রদ্বীপে জল বাড়ায় নদীর ধারের বেশ কিছু পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ব্রহ্মাণী নদীর জল উপচে দেয়াসিন ও খাসপুরের মাঝে বাঁশের সেতু ডুবেছে। মহকুমা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক বামদেব সরখেল জানান, বুধবার পর্যন্ত মহকুমার ৩০০টি বাড়ি আংশিক ও ২১টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ব্লকে ব্লকে ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্পিডবোট ও চার হাজার ত্রিপল মজুত রয়েছে। অজয়ের বাঁধ সংস্কারে মাঝিগ্রাম ও ভাল্যগ্রামের কিছু জায়গায় এবং দাঁইহাটের কাছে চরসাহাপুরে বালির বস্তা দিয়েছে সেচ দফতর।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের দেবনগর, কুঠুরিয়া, সিমলা, হালতেচরা, ঝাউডাঙা, কাশীপুরের মতো গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে। কালনা মহকুমা প্রশাসনে দাবি, ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে শিবিরে আনা হচ্ছে বাসিন্দাদের। বেগপুর পঞ্চায়েতের চৌঘুর, চাঁদপুর, নারায়ণপুর, তৈপাড়া-সহ ২০টি মৌজায় চাষের জমি তলিয়েছে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের তাঁত ঘরে জল ঢোকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু শ্রমিক। মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘প্রতিটি ব্লকে ত্রিপল, চাল পাঠানো হচ্ছে। শনি, রবিবার পঞ্চায়েত খোলা রাখতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy