দুর্যোগ: ঝড়ে উড়ে গিয়েছে ঘরের চাল। মন্তেশ্বরে। নিজস্ব চিত্র
কালবৈশাখীর প্রথম হানাতেই লন্ডভন্ড হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা।
কালনা, মন্তেশ্বর, মঙ্গলকোট, ভাতারে ঝড়-জলের বলি বেশ কয়েক জন। ফসলের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিস্তর। গ্রামাঞ্চল তো বটেই, শহরেও টানা বারো ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি কালনা মহকুমা হাসপাতালও রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎহীন। সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাইয় জানালেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেনারেটরে চলছে। কিন্তু, সারা রাত বিদ্যুৎ না মিললে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।
ভাতারের নবাবনগরের চাষি রাধারমণ সরকার (৫৭) সোমবার সকালে খেতজমি দেখতে যান। ঝরে পড়া ধান দেখে জমির উপরেই পড়ে যান ওই প্রৌঢ়। পরে চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী অলকাদেবীর দাবি, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ঋণ নিয়েছিলেন। এ ছাড়াও মহাজনের ঋণ ছিল। প্রায় ৫০ বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ঝড়ে সর্বনাশ হয়ে গেল!”
দুর্যোগের মধ্যেই কালনার নিভুজিবাজারের কাছে ইটভাটায় কাজ করছিলেন উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা কয়েক জন শ্রমিক। ঝড়ের গতি দেখে তাড়াহুড়ো করে নীচে নামার সময় একটি ঘরের চাল থেকে টিন উড়ে এসে ফায়ারম্যান রঘু প্রসাদের (৪৪) কপালে লাগে। সেখানেই মারা যান তিনি। মন্তেশ্বরের তাজপুরে রাতে প্রবল হাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে মোটরবাইকের ধাক্কা লেগে মৃত্যু হয় চাষি নজরুল মোল্লার (৪৬)। ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছিল মঙ্গলকোটের বনকাপাশির পুকুরপাড়ে। সোমবার সকালে সেই পুকুর পাড় দিয়ে পাতা কুড়িয়ে ফেরার সময় গাছ থেকে ঝোলা বিদ্যুতের তার লেগে মারা যান উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মৌসুমী মাঝি (৩২)। ৩৩৪টি গ্রাম, ২টি পুরসভার ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ৬৯ হাজার হেক্টর জমির ৭০ শতাংশ ধান ঝরে পড়েছে। কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আর্থিক ক্ষতির হিসেব করে নবান্নে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy