এ ভাবেই ছড়াচ্ছে দূষণ। ফাইল চিত্র।
ফসল কেটে নেওয়ার পরে গাছের বাকি অংশ জমিতে পোড়ানো চলবে না, নির্দেশ দিয়েছিল কৃষি দফতর। এর ফলে দূষিত হয় পরিবেশ। সম্প্রতি আশপাশের এলাকায় এ ভাবে জমিতে আগুন ধরানোর ফলে ভয়াবহ দূষণ হয় দিল্লিতে। তার জেরেই জেলায় চাষিদের এমন কাজ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। কিন্তু বেশির ভাগই সেই নির্দেশ না মানায় তাঁরা উদ্বিগ্ন, জানান কৃষি কর্তারা।
ধান বা গম কাটার পরে গাছের বাকি অংশ, যা নাড়া বলে পরিচিত, পুড়িয়ে ছাই করে মাটিতে মিশিয়ে দিলে জমি উর্বর হয় বলে মনে করেন চাষিরা। তাই বরাবর তাঁরা সেটাই করে থাকেন। কিন্তু কৃষি দফতরের মতে, এর ফলে জমি উর্বর তো দূর, উল্টে মাটিতে থাকা চাষের জন্য উপকারি পোকামাকড়, জীবাণু মরে গিয়ে আখেরে ক্ষতি হয়। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ তো হয়ই। মাস দুয়েক আগে দিল্লির কালো ধোঁয়ার আবরণে ঢেকে যাওয়ার পরে পঞ্জাব-হরিয়ানার খেতে আগুন ধরানোর দিকে আঙুল উঠেছিল। আগে হাতে ফসল কাটা হতো। এখন বেশির ভাগটাই যন্ত্রে (কমবাইন্ড হারভেস্টার) কাটা হয়। ফলে, গাছের অনেকটা অংশ রয়ে যায় জমিতে। ধান উঠে গেলেই অনেকে রবিশস্য চাষ করেন। তাই দ্রুত ওই জমিতে থাকা অংশ সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়। খরচ ও সময়, দুই বাঁচাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার রাস্তা নেন চাষিরা।
নভেম্বরের মাঝামাঝি কৃষি দফতর ধানগাছের ওই অংশ মাঠে পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জানায়। এ ব্যাপারে চাষিদের সচেতন করতে স্থানীয় কৃষি আধিকারিকদের উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চাষিদের জন্য লিফলেট বিলি করা হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে সচেতন করার প্রয়াস কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে। সেই সময় ‘নাসা ভিজিবল আর্থ’ সংস্থার পক্ষ থেকে উপগ্রহ চিত্র পাঠিয়ে এ ব্যাপারে কৃষি দফতরকে উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়। দেখা যায়, জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে জমিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকও ছিল।
এ বার দিল্লির দূষণের পরে কৃষি দফতরের তৎপরতা বাড়ে। জেলা সহ-কৃষি অধিকর্তা (বীজ) মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘চাষের জন্য জমির উপরিভাগের ছ’ইঞ্চি অংশ গুরুত্বপূর্ণ। আগুন লাগালে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জমির এই অংশ। তাছাড়া দরকারি জীবাণু বা অনুখাদ্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, জমির উর্বরতা কমতে থাকে। এক সময় জমি বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।’’
তবে নিষেধাজ্ঞার পরেও জমিতে আগুন লাগানো চলছেই বলে অভিযোগ। মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, গলসি হোক বা কাঁকসা, দুর্গাপুর-ফরিদপুর— এ বারও সর্বত্র সেই চিত্র দেখা গিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, পরিবেশ ও জমির ভবিষ্যতের কথা ভেবে সচেতনতা তৈরি ছাড়াও নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিত। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, নিয়মিত নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো আপাতত তাদের নেই। তাই চাষিদের সচেতন করেই এই প্রবণতা রোধে জোর দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy