Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মদের আসরে বেসামাল করেই গলায় দড়ির ফাঁস

ছক কষা ছিল আগে। সেইমতো মদের আসর বসিয়ে নেশাগ্রস্ত করার পরে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা হয় অন্ডালের দেবানন্দ বাউরিকে। পরে ট্রাঙ্কে ভরে ফেলা হয় তাঁর দেহ। দেবানন্দের স্ত্রী-সহ ধৃত দু’জনকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে দাবি করল পুলিশ।

অন্ডালের মান্দরায় খুনের বিবরণ শুনতে অভিযুক্তদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

অন্ডালের মান্দরায় খুনের বিবরণ শুনতে অভিযুক্তদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অন্ডাল শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

ছক কষা ছিল আগে। সেইমতো মদের আসর বসিয়ে নেশাগ্রস্ত করার পরে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা হয় অন্ডালের দেবানন্দ বাউরিকে। পরে ট্রাঙ্কে ভরে ফেলা হয় তাঁর দেহ। দেবানন্দের স্ত্রী-সহ ধৃত দু’জনকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে দাবি করল পুলিশ। ঘটনাস্থলে ধৃতদের নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করিয়েছে তারা।

১২ ফেব্রুয়ারি সকালে অন্ডালের খান্দরায় নীলকণ্ঠ ভুঁইয়াপাড়ায় বছর বিয়াল্লিশের দেবানন্দের দেহ উদ্ধার হয় বাড়ির একটি বড় ট্রাঙ্ক থেকে। তাঁর স্ত্রী লালমন্তি ইসিএলের কয়লা খনি-শ্রমিক। দেবানন্দের মতো লালমন্তিও আদতে ঝাড়খণ্ডের নিরশার বাসিন্দা। প্রথম স্বামী সুরেশ ভুঁইয়ার মৃত্যুর পরে, ২০১১ সালে সে দেবানন্দকে বিয়ে করেছিল। আগের পক্ষের দু’টি ছেলে রয়েছে তার। ঘটনার পরে প্রতিবেশীদের সন্দেহ গিয়ে পড়েছিল বছর চল্লিশের লালমন্তির উপরেই। আগের পক্ষের দেওর অমরজিৎ ভুঁইয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সে স্বামীকে খুন করিয়েছে বলে অভিযোগ করেন পড়শিরা। পুলিশ দু’জনকেই গ্রেফতার করে।সোমবার লালমন্তি ও অমরজিৎকে ছ’দিন পুলিশি-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় দুর্গাপুর আদালত। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শারীরিক পরীক্ষা করানোয় হয় দুই অভিযুক্তের। তার পরে দু’জনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লালমন্তির সামনেই অমরজিৎ পুলিশকে জানায়, ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে কী ভাবে খুন করা হয়েছিল দেবানন্দকে।

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, অমরজিৎ তাঁদের জানিয়েছে, ওই রাতে দেবানন্দের সঙ্গে সে মদের আসর বসায়। নিজে কম নেশা করে, কিন্তু দেবানন্দকে বেশি মদ্যপান করায়। তিনি বেসামাল হয়ে পড়লে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে। তখন লালমন্তি পাশের ঘর থেকে তার হাতে একটি দড়ি এনে দেয়। সেই দড়ি দিয়েই গলায় ফাঁস দেওয়া হয় দেবানন্দের। সেই সময় লালমন্তি তাঁর পা দু’টি চেপে ধরে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই দেবানন্দের দেহ নিথর হয়ে যান। তখন দু’জনে মিলে মৃতদেহটি ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেয়। তার পরে সেই চাবি কিছু দূরে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে আসে। লালমন্তির দুই ছেলে যাতে কোনও ভাবে চাবি হাতে পেয়ে ট্রাঙ্ক খুলে না ফেলে, সে জন্যই এই সতর্কতা বলে দাবি করে অমরজিৎ। পুলিশ তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে চাবিটি উদ্ধার করে।

পুলিশের দাবি, জেরায় লালমন্তি তাদের জানিয়েছে, দেবানন্দের কোনও স্থায়ী রোজগার ছিল না। মাঝেমধ্যে দিনমজুরি করে যেটুকু আয় হতো, তার অনেকটাই তিনি খরচ করতেন মদ্যপানের পিছনে। তা নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে অশান্তি চলছিল। দিনকয়েক আগে লালমন্তি নিরশা থেকে অমরজিৎকে ডেকে পাঠিয়ে দেবানন্দকে খুনের পরিকল্পনা করে। পরে নিরশায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার নাম করে ট্রাঙ্কটি গাড়িতে তুলে অন্যত্র ফেলে দেওয়ার ভাবনা ছিল তাদের। কিন্তু দুর্গন্ধ ছড়ানোয় স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ খোঁজাখুঁজি করে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Trank Drunk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE