ইচ্ছেমতো কয়লা চাপিয়ে ছুটছে গাড়ি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
অতিরিক্ত মাল তুলে দৌড়তে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাক কখনও ধাক্কা দিচ্ছে মোটরবাইক আরোহীকে। আবার কখনও ডাঁই করে তোলা কয়লা চলন্ত গাড়ি থেকে ছিটকে আহত করছে পথচারীকে। কয়লা, বালি বা মাটি— বাড়তি পরিমাণে তুলে ট্রাক বা মালবাহী গাড়ি ছুটে চলায় শিল্পাঞ্চলের পথ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রশাসনের দাবি, ওভারলোডিং ধরা পড়লেই নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হচ্ছে। সেই বাবদ বহু টাকা রাজস্বও আদায় হচ্ছে আসানসোল-দুর্গাপুরে। কিন্তু পরিবহণ দফতরে কর্মীর অভাব থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, দাবি প্রশাসনের একাংশের।
বছর পাঁচেক আগে কাজোড়ার বাসিন্দা রাজা চক্রবর্তী টপলাইনে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটি কয়লার ডাম্পার আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দিলে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ডাম্পারটি অতিরিক্ত কয়লা তুলে যাচ্ছিল। গত ডিসেম্বরে কাজোড়া-হরিপুর রাস্তায় ভূতবাংলার কাছে একটি ট্রাক থেকে ছিটকে পড়া কয়লায় গুরুতর জখম হন এক মোটরবাইক আরোহী। মাসখানেক আগেই পরাশিয়ায় ডাম্পার থেকে কয়লা উপচে পড়ার জেরে আহত হয় এক নাবালিকা। খনির পরিবহণ আটকে রেখে বিক্ষোভও দেখান এলাকাবাসী। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্ডালের বাবুইসোল থেকে টপলাইন নতুন রাস্তা এই ভারী কয়লার গাড়ির দৌরাত্ম্যে ভাঙতে শুরু করেছে।
কাজড়োর বাসিন্দা, সিটু নেতা মলয় বসুরায়ের দাবি, বাড়তি মাল নিয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে রাস্তায় বাঁকগুলিতে বেশি জিনিস ছিটকে পড়ে। ফলে বেশি বিপজ্জনক হয়ে যায় এলাকা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রতিটি খনি থেকে সাইডিং যাওয়ার সময়ে ওভারলোড করে কয়লা নিয়ে যাওয়া হয়। এর জেরে খনি এলাকার সংযোগকারী রাস্তাগুলি সারানো হলেও অল্প দিনেই বেহাল হয়ে যায়। ওভারলোড বন্ধের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনও তরফে সাড়া মেলেনি।’’
শুধু কয়লা নয়, বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, খনি ভরাট করার জন্য নিয়মিত প্রচুর বালি পরিবহণ হয়। আঢাকা অবস্থায় উপচে পড়া বালি তুলে ট্রাক যাতায়াত করায় নানা এলাকার রাস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডামরা, কালিপাহাড়ি, তিরাট, দামালিয়া, অন্ডাল রেল টানেল, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাণ্ডবেশ্বর ঘাট থেকে শোনপুর বাজারি প্রকল্প পর্যন্ত রাস্তা বালিতে ভরে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিকের দাবি, রাস্তায় বালি, মাটি পড়ে থাকার জেরে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী অবশ্য জানান, আসানসোলের রামপুর ও দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পরিবহণ দফতরের দু’টি চেকপোস্ট আছে। কোনও গাড়ি বাড়তি মালবোঝাই করলে সেখানে ধরা পড়ে। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যায়, ওভারলোড করলে দু’হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি প্রতি টন বাড়তি মালের জন্য হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।
তবে পরিবহণ দফতরে কর্মী কম থাকায় অভিযানে সমস্যা হয় বলে কর্তাদের দাবি। এক আধিকারিক জানান, দফতরের আসানসোল সদর কার্যালয়ে ৫ জন ইনস্পেক্টরের পদ থাকলেও তিনটি পদ শূন্য। দু’জন কার্যালয়ের নানা কাজ সারার পরে আর অভিযানে যেতে পারেন না। দুর্গাপুর সদরে চার জনের জায়গায় আছেন তিন জন। রামপুর চেকপোস্ট পাঁচটি পদ খালি। দফতরের আসানসোলের আধিকারিক (এআরটিও) মানস হালদার জানান, এত সমস্যা সত্ত্বেও শেষ অর্থবর্ষে অভিযান চালিয়ে আসানসোলে ৬৮ লক্ষ ও দুর্গাপুরে দেড় কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজন মতো ইনস্পেক্টর বাড়ানো হলে ওভারলোড-সহ নানা খাতে আরও বেশি রাজস্ব আদায় করা যাবে।’’ কর্মী সংখ্যা কম বলে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে চেকপোস্ট বসানো যাচ্ছে না, মেনে নেন প্রলয়বাবুও। তবে শীঘ্র এই সমস্যা কেটে যাবে, আশা তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy