Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের দ্বন্দ্বে গুলিতে জখম নেতা

তৃণমূল নেতা গুলিতে জখম হওয়ার ঘটনায় বিনপুরের হাড়দায় শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলই প্রকাশ্যে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ হাড়দা গ্রামে নিজের বাড়িতেই গুলিতে জখম হন তৃণমূলের হাড়দা অঞ্চল সভাপতি তথা বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিন্টু সাহা। এই ঘটনায় সিন্টুর দাদা পেশায় ঠিকাদার পিন্টু সাহা বিনপুর থানায় যে চার জনের নামে অভিযোগ করেছেন, তার মধ্যে তিন জনই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক।

আদালতে ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র।

আদালতে ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৯
Share: Save:

তৃণমূল নেতা গুলিতে জখম হওয়ার ঘটনায় বিনপুরের হাড়দায় শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলই প্রকাশ্যে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ হাড়দা গ্রামে নিজের বাড়িতেই গুলিতে জখম হন তৃণমূলের হাড়দা অঞ্চল সভাপতি তথা বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিন্টু সাহা। এই ঘটনায় সিন্টুর দাদা পেশায় ঠিকাদার পিন্টু সাহা বিনপুর থানায় যে চার জনের নামে অভিযোগ করেছেন, তার মধ্যে তিন জনই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। আর এক জন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই অদ্বৈত আকুলি (সদ্য বিজেপিতে আসা) ও স্বপন মণ্ডল নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বাড়ির পিছন দিকে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন সিন্টু। অভিযোগ, তখনই দূর থেকে গুলি করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন সিন্টু। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর বুকের ডান দিক ছুঁয়ে গুলিটি বেরিয়ে গিয়েছে। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাঁর।

এই ঘটনায় ধৃত অদ্বৈত সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিজেপি-র হাড়দা অঞ্চল সভাপতি। আর এক ধৃত স্বপন মণ্ডল তৃণমূল সমর্থক। শুক্রবার ধৃতদের ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। ঘটনায় দলের স্থানীয় নেতার গ্রেফতার অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো বলেন, “তৃণমূল গোষ্ঠীকোন্দল ঢাকতে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, বাকি দুই অভিযুক্ত রাজেশ মণ্ডল ও অমল সিংহ পলাতক। রাজেশ তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। তাঁর স্ত্রী ঝুমা মণ্ডল হলেন হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা। স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল পরিচালিত হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজকর্ম মূলত সিন্টুবাবুই নিয়ন্ত্রণ করেন। এই নিয়ে হাড়দা ১ নম্বর গ্রাম সংসদের প্রাক্তন বুথ সভাপতি রাজেশের সঙ্গে সিন্টুর সম্পর্কের অবনতি হয়।

শুক্রবার ফোনে রাজেশ বলেন, “সিন্টু ও তাঁর অনুগামীরা পঞ্চায়েতের উন্নয়নের টাকা লুঠ করছেন। সিন্টুর দাদা ঠিকাদার পিন্টুবাবুই শুধু কাজের বরাত পাচ্ছেন। এ সব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি আমাকে বুথ কমিটির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনপুর থানায় দু’দিন আটকে রেখে আমাকে চাপও দেওয়া হয়।” রাজেশের অভিযোগ, সিন্টুর ‘কু-কীর্তি’ লিখিত ভাবে দলের ঊর্ধ্বতন মহলে জানাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলেই খুনের চেষ্টার মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিন্টুর পাল্টা অভিযোগ, “দুর্নীতি ও নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিল রাজেশ। দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আক্রোশেই রাজেশ ও তাঁর সঙ্গীরা আমাকে আমাকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করেছিল।” পিন্টুবাবুর বক্তব্য, “আমার ভাই জনগণের জন্য কাজ করেন। এলাকায় আমাদের সুনাম রয়েছে। আমরা সম্ভ্রান্ত পরিবার। অসৎ পথে টাকা উপার্জনের প্রয়োজন নেই।”

সিন্টুর উপর হামলা প্রতিবাদে শুক্রবার হাড়দা গ্রামে ধিক্কার মিছিল করে তৃণমূল। তাতে পা মেলান শালবনির তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। যদিও মিছিলে শ্রীকান্তবাবুর উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সিন্টু-অনুগামীরা। তাঁদের অভিযোগ, গুলি চালনায় অভিযুক্ত রাজেশকে মদত দিচ্ছেন বিধায়ক। পিন্টুবাবুরও অভিযোগ, “আসামাজিক কাজের জন্য রাজেশকে কয়েক দিন আগে পুলিশ আটক করেছিল। তখন জেলার এক নেতা বিনপুর থানায় ফোন করে রাজেশকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। তিনিই আবার এ দিন ভাইয়ের জন্য মিছিলে হাঁটলেন!” অভিযোগ অস্বীকার করে শ্রীকান্তবাবু বলেন, “জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে হাড়দা গিয়েছিলাম। বিজেপি ও স্থানীয় দুষ্কৃতীরা সিন্টুবাবুর উপর হামলা চালিয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE