Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের দেওয়ালই যেন পড়ার বই

দেওয়ালেরও জ্ঞান আছে! আর সেই জ্ঞান দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে সে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের জঙ্গলঘেরা প্রত্যন্ত কুমারী গ্রামের ‘কুমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র দেওয়াল জুড়ে রয়েছে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজি অক্ষরমালা, যুক্তাক্ষর, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের ধারণা।

স্কুলের দেওয়াল

স্কুলের দেওয়াল

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৬
Share: Save:

দেওয়ালেরও জ্ঞান আছে! আর সেই জ্ঞান দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে সে।

ঝাড়গ্রাম ব্লকের জঙ্গলঘেরা প্রত্যন্ত কুমারী গ্রামের ‘কুমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র দেওয়াল জুড়ে রয়েছে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজি অক্ষরমালা, যুক্তাক্ষর, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের ধারণা। কীভাবে মুখ থেকে খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছয়, কেন বৃষ্টি হয়, বায়ু মণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য, সৌরজগত, দৈর্ঘ্য, ওজন ও আয়তনের বিভিন্ন একক, উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ, পরিবার পরিচিতির মতো বিষয়গুলি পড়ুয়ারা শেখে স্কুলের দেওয়াল পড়ে!

সেই কারণেই আস্ত স্কুলবাড়িটাই একটা পাঠ্যবই! স্কুলে গিয়ে শিশু পড়ুয়াদের বই খোলার দরকার খুব কমই হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বরূপচন্দ্র বিশুই এবং সহ শিক্ষক মলয় মাইতির ভাবনাপ্রসূত এই ‘দেওয়াল পাঠের’ ফলে পড়ুয়ারা সহজেই পাঠ্যসূচির বিষয়বস্তু মনে রাখতে পারে। ছোট্ট গ্রামের স্কুল। তাই পড়ুয়া সংখ্যা মাত্র ৪৬। তা বলে কর্তব্যে কোনও গাফিলতি নেই দুই শিক্ষকের। সরকারি স্কুলে কিছু হয় না, এই অপবাদ ঘুচিয়ে দিয়েছেন স্বরূপবাবুরা। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তিলে তিলে স্কুলটিকে প্রকৃত অর্থে বিদ্যা-মন্দির হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। দেওয়াল পাঠের এই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা সর্বশিক্ষা মিশনের। ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক স্বরূপবাবু নিজে। পিছিয়ে নেই সহশিক্ষক মলয়বাবুও। আজ, সোমবার শিক্ষকদিবস উপলক্ষে স্কুল প্রাঙ্গণে পড়ুয়া ও গ্রামবাসীদের নিয়ে এক মিলনোত্‌সবের আয়োজন করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের খরচ জোগাচ্ছেন সহশিক্ষক মলয়বাবু। শিক্ষক দিবসের দিনে প্রকাশিত হবে পড়ুয়াদের হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা ‘হাতেখড়ি’।


কুমারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন।

২০০৩ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন স্বরূপবাবু। ২০১৪-র গোড়ায় সহশিক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন মলয় মাইতি। স্বরূপবাবু ও মলয়বাবুর বক্তব্য, “ছবি ও লেখা দেখে পড়ুয়ারা শিখছে তাড়াতাড়ি। মনেও রাখতে পারছে সহজে।” স্কুলপড়ুয়া আশিস হাঁসদা, দীপক মাহাতো, লক্ষ্মীপ্রিয়া মাহাতো, সুষমা কিস্কু, পিয়াসা মাহাতোদের বক্তব্য, “দেওয়ালের লেখা ও ছবি দেখে সময়ের অঙ্ক, ভগ্নাংশ, বৃষ্টিপাতের কারণ, মানুষের পরিপাকতন্ত্রের মতো নানা বিষয়গুলি খুব সহজে বুঝতে পারছি। মনেও রাখতে পারছি।”

এক অভিভাবক অমিত পাণ্ডে, গ্রামবাসী সত্যজিৎ মাহাতো, রসময় পাতরদের বক্তব্য, “মাস্টার মশাইদের এমন উদ্যোগে ফলে গ্রামে কোনও স্কুলছুট শিশু নেই।” স্কুলের দেওয়ালে চিত্রিত মিড ডে মিলের মেনুর তালিকা অনুযায়ী, মাসে এক দিন মাংস। এক দিন গোটা ডিম। এ ছাড়া সপ্তাহে প্রতি দিন পড়ুয়াদের পাতে দেওয়া হয় ডাল ও নানা তরকারি। যার বেশির ভাগই স্কুলের বাগান থেকে মেলে। প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি ভেষজ উদ্যান। স্কুলের প্রাচীরের দেওয়ালে শৌচাগার ব্যবহার, বনসৃজন, প্লাস্টিক বর্জন, জলের অপচয় রোধের মতো নানা সচেতন-বার্তাও রয়েছে।

ঝাড়গ্রাম পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক চন্দন খুঁটিয়া বলেন, “শুধু সদিচ্ছাটুকু থাকলেই অসাধ্যসাধন করা যায়, সেটা দুই শিক্ষক করে দেখিয়েছেন।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বরূপবাবু ও সহশিক্ষক মলয়বাবুর কথায়, “সরকারের সব রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে, সেগুলি আদায় করে নিতে পারলে যে কোনও সরকারি স্কুল-ই আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। এরই পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ভালবাসতে হবে।”

ছবি দু’টি তুলেছেন দেবরাজ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school wall paintin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE