নির্মীয়মাণ নন্দীগ্রাম স্টেশনের হাল এমনই (বাঁ দিকে), নন্দীগ্রাম বাজার সংলগ্ন নতুন বাইপাস বদলে দিয়েেছ এলাকার চেহারা (ডান দিকে)।
কেমিকেল হাব তৈরি করে নন্দীগ্রামকে ‘দ্বিতীয় হলদিয়া’ গড়তে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকার। সেজন্য নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় কারখানা বা হাবের জন্য জমি হারাতে চাননি নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী আন্দোলন। কঠিন পরিস্থিতির সামনে পড়ে আন্দোলনের ফলে তৎকালীন রাজ্য সরকার ঘোষণা করতে বাধ্য হয়, জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। নন্দীগ্রামের সেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের ফলেই বামেদের সরিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল।
মাঝে কেটে গিয়েছে আরও আট বছর। আন্দোলনের পর নন্দীগ্রামের বর্তমান শিল্পের ছবিটা কেমন?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নতুন সরকারের আমলে হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা রাস্তা, আলো ও পরিকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ন করেছে ঠিকই। তবে কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প আসেনি বললেই চলে। মমতা বন্দোপাধ্যায় যে নন্দীগ্রামের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছেন সেই নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া থেকে এ পর্যন্ত এসেছেন মাত্র দু’বার। ২০১২ সালে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এবং ২০১৪ সালে দলীয় কর্মসূচিতে। ক্ষমতায় আসার আগে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। সেগুলির
কী হাল?
২০১০ সালের ৩০জানুয়ারি মমতা বন্দোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দেশপ্রাণ-নন্দীগ্রাম ১৭ কিলোমিটার রেলপথের শিলান্যাস করেছিলেন। জমি অধিগ্রহণ করে বিক্ষিপ্তভাবে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছিল। নন্দীগ্রামে স্টেশন তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল। ঘোলপুকুরিয়াতে রেলসেতু তৈরি শুরু হলেও গত এক বছর সেই কাজ বন্ধ। গত রেল বাজেটে দেশপ্রাণ নন্দীগ্রাম রেলপথের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়নি। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দোপাধ্যায় হলদিয়া থেকে নন্দীগ্রামের জেলিংহাম ওয়াগান যন্ত্রাংশের কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু আজ পাঁচ বছর হতে চলল সেই প্রকল্পের কিছুই হয়নি। কাজ হয়েছে বলতে, মুখ্যমন্ত্রী ২০১২ সালের মার্চ মাসে নন্দীগ্রামে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন তার কাজ চলছে। তাছাড়াও নন্দীগ্রামের হরিপুরে কিষাণ মান্ডি চালু হয়েছে সম্প্রতি। নন্দীগ্রাম বাস টার্মিনাসেরও সংস্কার হয়েছে।
কিন্তু নতুন কোনও কারখানা বা কর্মসংস্থানের জায়গা? উত্তরটা কিন্তু সদর্থক নয়। নন্দীগ্রাম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তথা নন্দীগ্রামের বাসিন্দা দিলীপ তেওয়ারি বলেন, ‘‘১৯৮২ সালে নন্দীগ্রাম উন্নয়ন পরিষদ গড়ে আন্দোলন করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে শহিদ হয়েছিল। তবে এইচডিএ-র উদ্যোগে এখন অনেক কাজ হয়েছে। তবে কাজের সুযোগ তেমন কোথায়?’’ নন্দীগ্রামের শেখ ফিরোজ দর্জির কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের তো মাল কলকাতায় পাঠানো জন্য বাসের ছাদে চেপে যেতে হয়। সেই কারণে পুলিশি হেনস্থার মুখেও পড়তে হয়। রেলপথের কাজ দেখে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রেলপথের কাজও থমকে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির কথায়, ‘‘রাস্তা, আলো এসব দিয়ে তো আর মানুষের পেট ভরবে না। নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ কোথায়? এজন্যই আমরা নন্দীগ্রামকে দ্বিতীয় হলদিয়া করে তুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তা করতে দেয়নি। ইতিহাস তৃণমূলকে ক্ষমা করবে না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তপন করেরও অভিযোগ, ‘‘ নন্দীগ্রাম রেলপথ অবৈজ্ঞানিক ছিল। এতে নন্দীগ্রামের মানুষের হয়তো লাভ হত। কিন্তু রেলের ক্ষতি হত। সেটা রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই অদূরদর্শিতার পরিচায়ক।’’
নতুন সরকারের আমলে কী পেয়েছে নন্দীগ্রাম? জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা নন্দীগ্রামের বাসিন্দা শেখ সুফিয়ান জানান, ‘‘রেলের জন্য যারা জমি দিয়েছেন তাদের অনেকেই চাকরি পেয়েছেন। নন্দীগ্রামে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। নন্দীগ্রাম বাইপাস রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বাস টার্মিনাসের সংস্কার করা হয়েছে। সোনাচূড়াতে আইটিআই কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে। নন্দীগ্রামের কেন্দেমারিতে হলদি নদীর ওপর পন্টুন জেটি তৈরি হয়েছে। মানুষের চাহিদার কথা আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। যে কাজগুলো বাকি রয়েছে, তা শীঘ্রই শুরু হবে।’’
ছবি: আরিফ ইকবাল খান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy