উদ্বোধনের অপেক্ষায় কম্প্যাক্টর যন্ত্র। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ভ্যাট থেকে উপচে পড়ছে জঞ্জাল।
কুকুরের দাপটে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা। রাস্তা চলার সময় একটু অন্যমনস্ক হলেই পা পড়বে সোজা নোংরায়। খড়্গপুর শহরের এই ছবি কারও অচেনা নয়। বর্ষায় অবস্থা যে আরও তথৈবচ হবে তা বলাই বাহুল্য।
প্রতিটি ওয়ার্ডেই জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য সাফাই কর্মী রয়েছে। যদিও সাফাই নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত কুড়ি বছর শহরের পরিধি বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আবর্জনার পরিমাণও। শহরের বিভিন্ন ভ্যাটে প্রতিদিন গড়ে ৭০ মেট্রিক টন আবর্জনা জমে। শহরবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি, দৈনিক এই বিপুল পরিমাণ আবর্জনা পরিষ্কার করতে প্রচুর সাফাই কর্মীর প্রয়োজন। যদিও তার অভাব রয়েছে। শহর কলকাতায় যেখানে অনেক আগেই বিভিন্ন ভ্যাটে কম্প্যাক্টর যন্ত্র বসানো হয়েছে। খড়্গপুরকেও সাফসুতরো করতে যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হোক।
সম্প্রতি খড়্গপুর পুরসভা মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে দু’টি কম্প্যাক্টর যন্ত্র পেয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, এই যন্ত্রের মাধ্যমে শহরে জঞ্জাল মোকাবিলায় গতি আনা যাবে। যদিও একাংশ কাউন্সিলরের দাবি, খড়্গপুর পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড। প্রতিদিন এই দু’টি গাড়িকে সব ওয়ার্ডে ঘোরানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া দু’টি যন্ত্রের মাধ্যমে শহরের বিপুল পরিমাণ জঞ্জাল পরিষ্কার করা কার্যত অসম্ভব। সে জন্য পুরো শহরের আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার ব্যবস্থা করার দাবিও জানাচ্ছেন অনেকে।
যদিও খড়্গপুরে এখনও কোনও বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি। পুরসভার পক্ষ থেকে সপ্তাহে দু’-এক দিন ডাম্পার অথবা ছোট-ছোট ট্রাকে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আবর্জনা নিয়ে গিয়ে শহরের আয়মার কাছে ফেলা হয়। যদিও সেখানে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় জঞ্জাল যত্রতত্র ছড়িয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাছাড়া পুরসভার গাড়িও নিয়মিত না আসায় ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে আবর্জনা জমেই থাকে। বিগত কংগ্রেস পুরবোর্ডের সময় শহরে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে তোলার জন্য আইআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে খড়্গপুর পুরসভা। যদিও পরিকল্পনা স্তরেই আটকে সেই কাজ। বর্তমান পুরবোর্ড আর সে বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। তৃণমূল বোর্ড খড়্গপুরের গোপালীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে তোলার জন্য জমি চেয়ে মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করে। যদিও এখনও জমি না মেলায় কাজ এগোয়নি।
কী ভাবে কাজ করবে কম্প্যাক্টর দু’টি? এই যন্ত্রটির ওজন ১২ টন। গাড়িতে যন্ত্রটি বসানো রয়েছে। একসাথে ৮ টন পর্যন্ত আবর্জনা এই যন্ত্র ধারন করতে পারে। প্রাথমিক ভাবে এই যন্ত্র প্রবল চাপ তৈরি করে আবর্জনার জলীয় অংশ শুষে নেবে। ফলে আবর্জনার ওজনও কমবে। তারপর গাড়িতে করে আবর্জনা নিয়ে আয়মায় ফেলে আসা হবে। আগামী ৪ জুন খড়্গপুর পুরসভার তৃণমূল পুরবোর্ডের এক বছর পূর্ণ হবে। ওই দিনই কম্প্যাক্টর দু’টি উদ্বোধন করা হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ বিষয়ে খড়্গপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথ বলেন, “আমার ওয়ার্ডে যে সংখ্যক সাফাই কর্মী রয়েছে তাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্ডের আবর্জনা সংগ্রহ করে দীনেশনগরে ফেলে আসে। কিন্তু সপ্তাহে দু’-এক দিন পুরসভার গাড়ি আসে। এ বার এই দু’টি কম্প্যাক্টরও ক’দিন এলাকায় আসবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডেও বলেন, “কংগ্রেসের পুরবোর্ডের সময়ে প্রতিদিন পুরসভার গাড়ি প্রতিটি এলাকা থেকে আবর্জনা তুলে আনত। এখন কী হচ্ছে বলতে পারব না। তবে কম্প্যাক্টর দু’টি সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায় ও পর্যাপ্ত লোকবল থাকে তবে নিশ্চয় খড়্গপুর শহরকে জঞ্জাল মুক্ত করা সম্ভব।’’
পুরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর প্রদীপ দাস বলেন, “এখন আমাদের যে ডাম্পার, ট্রাক্টর রয়েছে তা দিয়ে শহরের সর্বত্র আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। তবে এক দিনে সব ওয়ার্ডে গাড়ি পাঠানো তো সম্ভব নয়। তবে আশা করছি শহরে জঞ্জাল সমস্যা মোকাবিলায় কম্প্যাক্টর গতি আনবে।” যদিও কম্প্যাক্টর দু’টি শহরের রেল এলাকার ৮টি ওয়ার্ডে আপাতত কাজ করবে না জানা গিয়েছে। এ নিয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও বক্তব্য, “কম্প্যাক্টর দু’টি রেল ওয়ার্ডে কাজ করবে না। শহরের রেল এলাকার আবর্জনা সাফাইয়ের দায়িত্ব রেলের হাতেই রয়েছে। তাই ওই ওয়ার্ডগুলিতে যে ভাবে আবর্জনা পরিষ্কার হয়, সে ভাবেই চলবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘নতুন কম্প্যাক্টরের সাহায্যে শহরে জঞ্জাল সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে বলে আশা করছি। পরিস্থিতি বুঝে পরে রেল এলাকার কথাও ভাবা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy