প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে নিরঙ্কুশ জয়ের ধারা অব্যাহত থাকল জেলা পরিষদেও।
পূর্ব মেদিনীপুর নতুন জেলা হওয়ার এই প্রথম বিরোধীশূন্য ভাবে জেলা পরিষদ দখল তৃণমূল। নতুন জেলা গঠনের পর এটি চতুর্থ পঞ্চায়েত ভোট। আগের তিনটিতে তবু বিরোধী অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু এ বার আর নেই কোনও বিরোধী স্বর। জেলা পরিষদের ৬০টি আসনের মধ্যে ৭ টিতে বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথ মসৃণ হয়েছিল শাসক দল তৃণণূলের। বাকি ৫৩ টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এইসব আসনের সবকটিতেই বিরোধী প্রার্থীদের চেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
কাঁথি-১ ব্লকের একটি আসনে ফের জয়ী জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল। নন্দীগ্রাম- ১ ব্লক থেকে জেলা পরিষদের আসনে ফের জিতলেন সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে ফের জয়ী হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস , পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস, কৃষি-সেচ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিক ও বন-ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মৃণালকান্তি দাস। মধুরিমা মণ্ডল এবার বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮২ ভোটে। শেখ সুফিয়ান এসইউসি প্রার্থীকে প্রায় ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন। তবে অধিকাংশ আসনেই তৃণমূলের পরেই দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে বিজেপি।
জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের পয়লা জানুয়ারি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিকভাবে ভাগ করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়। ওই বছরেই নতুন জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে নবগঠিত ওই জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছিলেন সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সিহি। ৫২ সদস্যের ওই নবগঠিত জেলা পরিষদে বামফ্রন্টের পাশাপাশি বিরোধী তৃণমূলের কয়েকজন সদস্যও ছিলেন। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। ফের জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচিত হন নিরঞ্জন সিহি। জেলা পরিষদে বিরোধী তৃণমূলের দু’জন সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের জেরে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ-সহ জেলার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে তৎকালীন রাজ্যের বিরোধীদল তৃণমূল। ৬০ সদস্যের জেলা পরিষদে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩। বামফ্রন্টের ১৭।
২০১১-তে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফের নিরঙ্কুশভাবে জিতে জেলা পরিষদের ক্ষমতা পায় তৃণমূল। ৬০ আসনের জেলা পরিষদে তৃণমূলের সদস্য দাঁড়ায় ৫৪ ও বামেদের ৬ জন। এবার পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের ৬০টি আসনের ৭টিতে মনোনয়ন জমাই দিতে পারেনি বিরোধীরা। সেগুলি বাদে ৫৩ টি আসনে তৃণমূলের প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হয় বামফ্রন্ট, বিজেপি-সহ বিভিন্ন বিরোধীদলের প্রার্থীদের। ৫৩ টি আসনেই তৃণমূল জয়ী হওয়ায় কার্যত বিরোধীশূন্য ভাবে জেলা পরিষদে ক্ষমতায় ফিরল তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে ব্যাপক উন্নয়নের জন্য মানুষ আমাদের সমর্থন করেছে। তাই জেলা পরিষদের সব প্রার্থীরা জিতেছেন।’’
নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘মনোনয়ন জমা এবং ভোট দিতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ভোটগণনা কেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থী ও তাঁদের প্রতিনিধিদের ঢুকতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত ভোট গণনা করেছে ও জয়ী হিসেবে শংসাপত্র নিয়েছে তৃণমূল । এতে মানুষের সমর্থন নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy