Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর নালিশ

সোমবার হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে চিকিৎসক ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পার্থ ঠাকুর এবং দুই নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৯
Share: Save:

রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের সামনে এল ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পরিকাঠামোর সমস্যা।

সোমবার হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে চিকিৎসক ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পার্থ ঠাকুর এবং দুই নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবার রাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা ভবতরণ পৈড়া (৫৮) মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি হন। শয্যার অভাবে তাঁকে মেঝেয় রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে আপত্তি জানান রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ৬৬টি। অথচ ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯০ জন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ কোনও রোগীকে ফেরানো চলবে না। তাই এই ব্যবস্থা। এমনকী ভবতরণবাবুর অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা যায়নি। কারণ, সেখানেও ১২টি শয্যার একটিও খালি ছিল না।

পরিজনদের অভিযোগ, রাতভর শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেঝেতে পড়েছিলেন ভবতরণবাবু। সারা রাত কষ্ট পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু অক্সিজেন দেওয়ার জন্য নার্সকেও পাওয়া যায়নি। পরে এক ওয়ার্ডবয় অত্যন্ত কম মাত্রায় অক্সিজেন দেন। মৃতের ছেলে সুকুমার পৈড়ার অভিযোগ, ‘‘বাবাকে ঠিক মতো দেখেননি চিকিৎসক ও নার্স। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাতেই বাবার মৃত্যু হয়েছে।’’ এ নিয়ে সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত ওই রোগীর অবস্থা এমনিতেই সঙ্কটজনক ছিল। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ চিকিৎসক পার্থ ঠাকুর তাঁকে দেখে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কর্তব্যরত নার্স ও কর্মীদের না জানিয়ে বাড়ির লোকজন রোগীর অক্সিজেন ‘মাস্ক’ খুলে তাঁকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়েছিলেন। এতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ভবতরণবাবু। আর তার পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। উল্টে অভিযোগ, খবর পেয়ে ওয়ার্ডে রোগীকে দেখতে গেলে তাঁকে মারধর করেন রোগীর পরিজনরা। তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে প্রহৃত হন হাসপাতালের দুই নিরাপত্তা কর্মীও।

চিকিৎসক ও কর্মী নিগ্রহের ঘটনায় ঝাড়গ্রাম থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসক ও কর্মীদের মারধর করা হলে তাঁরা কী ভাবে পরিষেবা দেবেন?’’ তিনি জানান, রোগীর পরিজনদের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করতে চাওয়া হলেও বাড়ির লোকেরা তাতে রাজি হননি।

সার্ভিস ডক্টরস্‌ ফোরাম-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “সুপার স্পেশ্যালিটির ঝাঁ চকচকে ভবন দেখিয়ে মানুষের মনে সীমাহীন প্রত্যাশা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রয়োজনীয় শয্যা বাড়েনি। উন্নত পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যাও বাড়েনি। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রোগীকে ফেরানো যাবে না। সেই কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সমস্ত সমস্যা জানিয়ে আমরা একাধিকবার রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।”

পার্থবাবুর বক্তব্য, “পুরো ঘটনা সুপারকে জানিয়েছি। কুড়ি বছরের চাকরি জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE