ক’দিন ধরেই ছেলেমেয়েগুলো বায়না ধরেছিল ‘আব্বা জলসায় নিয়ে চল’, রাজিও হয়ে গিয়েছিলাম। পাড়ার আরও কয়েকজন বলল তারাও যাবে। দেখলাম ভালই তো, এক সঙ্গে সকলে গেলে খরচটাও কম হবে। আবার অনন্দও হবে। সেই মত রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ টোটো ছাড়ে। আমরা টোটো চেপে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।গতি একেবারে ছিল না। অন্ধকার রাত। সারা রাত থাকবে চালককে তাই বলে দিয়েছিলাম, তাড়াহুড়ো করে চালানোর দরকার নেই। চালক আমাদের পাড়ার ছেলে। সেও সাবধানেই চালাচ্ছিল। কিন্তু কপালে যাদের মৃত্যু লেখা আছে তারা কি ভাবে বাঁচবে বল! উল্টো দিক থেকে হঠাৎ ধেয়ে এস ভয়ঙ্কর আলো, কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ধাক্কা, ছিটকে পড়লাম। রাস্তার পাশে মাটি খোঁড়া হচ্ছিল। চালক এক বার শেষ চেষ্টা করেছিল রাস্তার পাশে টোটোটাকে নামিয়ে দিতে। কিন্তু মাটি উচুঁ হয়ে থাকায় পারল না। শুধু লরির তীব্র আলো আর প্রচন্ড জোরে একটা শব্দ শুনলাম। তারপর আর কিছুই মনে নেই। তিনটে মেয়েই চলে গেল। চলে গেল স্ত্রীও। অনেক কষ্ট করে সংসারটাকে ধরে রেখেছিল এত দিন। জানি না এর পরে কী করে বাঁচব। ছোট মেয়েটা বড় কোলপোছা ছিল জানেন, টোটোয় ওঠার আগে এক বার বলেছিল, ‘আব্বা তোমার কোলে বসব’, নিতে চাইনি, তা হলে হয়ত ওটা বেঁচে যেত। আমি আর ছেলে, ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। আর কিছুই ভাল লাগছে না।
জখম যাত্রী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy