Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে পাওয়া স্বপ্নাদেশ

দীপান্বিতা যেন বাড়ির বৌ

ফি বছর বিজয়া দশমীর দিন থেকে কালীমূর্তির কাঠামো তৈরি দিয়ে সূচনা হয় কালীপুজোর। একাদশীতে কাঠামোয় মাটি দেওয়া। তার পর দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী বুড়িমা নামে পূজিতা হন। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, কলকাতা থেকেও অনেকে প্রতি বছর এই পুজো দেখতে আসেন।

ভট্টাচার্য বাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

ভট্টাচার্য বাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৩
Share: Save:

নতুন বৌ নিজে হাতে খাবার পরিবেশন করবেন নিমন্ত্রিতদের। এটাই রেওয়াজ। কিন্তু সেই আনন্দের অনুষ্ঠানে যে এমন ঘটবে, ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা।

সেই ঘটনা ঘটেছিল, নাকি ঘটেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, কালীগঞ্জের হরিনাথপুরে সেই ঘটনার কথা আজও লোকমুখে ফেরে। বৌভাতে ভাত দিতে গিয়ে নতুন বৌয়ের ঘোমটা গেল খুলে। এ দিকে নতুন বৌয়ের হাত জোড়া। এক হাতে ভাতের পাত্র, অন্য হাতে হাতা। কিন্তু, আচমকা আরও দু’টো হাত ঘোমটাটা টেনে নিল। তাই দেখে হতভম্ভ নিমন্ত্রিতের দল।

তাই দেখে লজ্জায় রাঙা নতুন বৌ ছুটলেন বাড়ির বাইরে। ব্যস, সেই বৌ-কে আর খুঁজে পায়নি কেউ। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের ঘটনা। তার পর থেকে হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে শুরু হয় কালী পুজো। সেই পুজো আজও চলছে। ভট্টাচার্য বাড়ির বর্তমান সদস্য মহেশ্বর ভট্টাচার্য জানান, বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার বাসিন্দা দুই ভাই ঠাকুরদাস বিদ্যারত্ন ও ছোট ভাই রাজারাম সিদ্ধান্ত নদিয়ায় আসেন। ছোট ভাই কালীগঞ্জের জুরানপুরে বটগাছের নীচে দিনরাত সাধনা করে। সংসারে মতি ফেরাতে ভাইয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ভাইও স্বপ্নাদেশ পান, মা কালী তাঁর স্ত্রী হয়ে বাড়িতে আসবেন।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মহুলা গ্রামে কনের সন্ধান মেলে। তার পরেই বৌভাতের সেই ঘটনা। রাজারাম যে রূপে মা কালীকে দেখেছিলেন, সেই মূর্তি গড়ে শুরু করেন পুজো।

ফি বছর বিজয়া দশমীর দিন থেকে কালীমূর্তির কাঠামো তৈরি দিয়ে সূচনা হয় কালীপুজোর। একাদশীতে কাঠামোয় মাটি দেওয়া। তার পর দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী বুড়িমা নামে পূজিতা হন। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, কলকাতা থেকেও অনেকে প্রতি বছর এই পুজো দেখতে আসেন।

ওই পরিবারের অন্যতম মহেশ্বর ভট্টার্চায। তিনি বলেন, ‘‘পুজো শুরুর সঠিক দিনক্ষণ না জানা গেলেও পরিবারের হিসেব বলছে, প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়। দেবী এখনও বাড়ির বৌ রূপে পূজিতা হন।’’ তবে প্রথার কিছুটা রদবদল ঘটেছে। আগে এই পুজোয় প্রচুর ছাগল বলির হত। বছর বারো আগে বলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারের সকলে বসেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE