সাগরদিঘির ডাঙাপাড়ায় সালিশির ঘটনার পরে দিলীপ মণ্ডল নামে এক শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা রামকৃষ্ণ মার্জিতের। ওই শিক্ষকের সুইসাইড নোটেও মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে ওই নেতাকে। রবিবার সকালের ওই ঘটনার পরে ওই দিন রাতেই রামকৃষ্ণের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত ওই শিক্ষকের দাদা সুকুমার মণ্ডল। কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশ রামকৃষ্ণকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “রামকৃষ্ণের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করা হয়েছে। শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে।”
গ্রাম্য সালিশি পর ওই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা ডাঙাপাড়া গ্রাম। তৃণমূলের নেতা-সহ ওই সালিশিতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা সকলেই গা ঢাকা দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার সালিশির প্রধান মাতব্বর তথা তৃণমূল নেতা অশোক মার্জিত জানিয়েছিলেন, সালিশির কাগজপত্র সব ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অথচ সোমবার সেই কাগজের প্রতিলিপি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে নামও রয়েছে অশোক মার্জিতের। শিক্ষককে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করার কথাও উল্লেখ রয়েছে ওই ‘মীমাংসা পত্রে’। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছেন, “সালিশির নামে যা চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। ওই শিক্ষককে এমনই চাপ দেওয়া হয়েছিল যে তিনি সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসলেন। তারপরেও পুলিশের কড়া পদক্ষেপের যদি এমন বহর হয় তাহলে সালিশি কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না।”পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর নিজেও জেলায় সালিশির বাড়বাড়ন্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে সালিশির বিচারকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ঘটনার পরে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করল না কেন? পুলিশ সুপার বলেন, “রামকৃষ্ণ ধরা পড়লেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হবে।”
মুর্শিদাবাদে সালিশির ঘটনা নতুন নয়। এই মাসেই সুতির একটি গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় সালিশি বসিয়ে টাকা দিয়ে বিষয়টি রফা করে নেওয়া হয়। গ্রামে থাকতে পারবেন না এই ভয়ে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ পর্যন্ত করতে পারেননি ধর্ষিতার পরিবার। ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মী বিশ্বনাথ দাস বলেন, “গ্রামে কোনও ঘটনা ঘটলে থানা, পুলিশ, আদালত করে ঝামেলা ও লোক-লজ্জা বাড়াতে চান না অনেকেই। তারই সুযোগ নেন গ্রামের কিছু মাতব্বর। দিলীপের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে।”
ঘটনা যাই থাক এ ভাবে সালিশি বসিয়ে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো কোনওভাবেই মানা যায় না বলে জানান কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক অশোক দাস। তাঁর অভিযোগ, “শাসক দলের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এক সময় সিপিএম করেছে। এখন তা তৃণমূল করছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশ কড়া পদক্ষেপ না করলে এই সালিশি বন্ধ করা যাবে না। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন করা দরকার।” সুতির বিধায়ক তৃণমূলের ইমানি বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “গ্রামের কিছু মানুষ আছেন যাঁরা টাকা পয়সা ঘটিত স্বার্থের কারণে গ্রামের বিভিন্ন ঘটনার কথা পুলিশকে জানাচ্ছেন না। ফলে সালিশির কথা পুলিশ জানতে পারছে না। তারপরে সালিশির জেরে কোনও অঘটন ঘটে গেলেও মাতব্বররা বেঁচে যাচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy