ধোঁয়া: শিলিগুড়ির রাস্তায় বেহাল অটো। দেখার নেই কেউ। নিজস্ব চিত্র।
কোনও ট্রাফিক সিগন্যালে থমকালে কালো ধোঁয়ায় দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। আবার নর্দমায়, ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে’ জমা জঞ্জালে তৈরি মিথেন গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ফলে, শিলিগুড়ির ঘরে-ঘরে বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। স্কুলপড়ুয়াদের মাথাব্যথা, চোখের রোগও হু হু করে বেড়ে চলেছে শিলিগুড়িতে।
বিশেষজ্ঞরা অনেকেই জানাচ্ছেন, বায়ু দূষণের হার বিপদসীমার উপরে চলে যাওয়ায় স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, পথচারী, ফুটপাতের হকার, রাস্তার ধারের ব্যবসায়ী, ট্রাফিক পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকেরই নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শহরের পরিবেশপ্রেমী, বিশিষ্টজনেরা দ্রুত পুরসভা-প্রশাসনকে প্রতিকারের অনুরোধ করেছেন।
পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একাধিক মিটিংও করেছেন। কিন্তু, আখেরে দূষণ কমাতে পুরসভার তরফে কবে থেকে কতটা কড়াকড়ি করা হবে, তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি অশোকবাবু। শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহরে ফিটনেস সার্টিফিকেটহীন যানবাহন চিহ্নিত করে জরিমানার হার বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
শিলিগুড়িবাসী খোদ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও শহরে বায়ু দূষণের জেরে রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কথা শুনে চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা কিছু করবে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে। শহরবাসীদের নিয়ে আমাদেরই করতে হবে। শীঘ্রই আমাদের সব কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসব। সকলে মিলে শহরের বাতাসের দূষণ কমাতে রূপরেখা তৈরি করে আসরে নামব।’’
তবে এ কাজে দেরি হলে যে বিপদ বাড়বে, তা পরিবেশপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন, শিলিগুড়ির বসুন্ধরা পরিবেশ সংস্থার কর্ণধার সুজিত রাহা বলেন, ‘‘অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ শহরবাসী রোগাক্রান্ত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শহরে আবাসনের প্রয়োজনে ফ্ল্যাটবাড়ি দরকার। কিন্তু, তা করতে গিয়ে একটা গাছ কাটলে অন্তত ৫টা গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে কোনও ফ্ল্যাট, আবাসনের ঘেরাটোপ পুরোপুরি কংক্রিট করা যাবে না। সেখানে একাংশে সবুজ ঘাস, গাছপালা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা না হলে বাড়ির নকশা অনুমোদন বন্ধ করার কথা বাবতে হবে।’’
উপরন্তু, শহরের নিকাশির বেহাল দশা নিয়েও ক্ষুব্ধ সুজিতবাবুরা। তাঁরা জানান, জমা জঞ্জালে তৈরি মিথেন গ্যাস থেকেও বাতাস দূষিত হচ্ছে। নিকাশির হাল ফেরাতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতির কর্তা রতন বণিক জানান, শহরে প্রতিটি যানবাহনের বায়ু দূষণের মাত্রা সঠিক ভাবে পরীক্ষার উপরো জোর দিয়েছেন।
শিলিগুড়ির একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ইদানীং স্কুল পড়ুয়া, ফুটপাতের হকার, ট্রাফিক পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটা বড় অংশের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা সহ ফুসফুসের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
তাঁরা জানান, ট্রাফিক সিগন্যালের সময়ে বহু যানবাহন ইঞ্জিন বন্ধ করে না বলে ধোঁয়া বেরোতেই থাকে। ফলে, আটকে পড়া পড়ুয়া, কর্তব্যরত পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার ও রাস্তা লাগোয়া হকার, দোকানদারদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে।
তাই শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শহরের দূষণ নিয়ে আমিও চিন্তিত। বিশেষ করে গাড়ি থেকে যে দূষণ ঘটছে। শহরের দূষণের ৪৪ শতাংশ ঘটছে গাড়ির ধোঁয়া থেকে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।’’
শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনের কর্তা মানস তরফদার বলেন, ‘‘ডিজেলের যানবাহন দূষণ একটু বেশি ছড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহার হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy