Advertisement
১১ মে ২০২৪

মজুরির টাকা নেই, খেতে চাষির স্ত্রীও

অন্তত এক সপ্তাহ রোজ তিন ঘণ্টা করে মাঠে থাকতে কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে অনুরোধ করেছিলেন লগেন রায়। প্রথমে আপত্তি করলেও, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বিক্রম রাজি হন। এখন সকাল হলেই ছেলে-মেয়ে বউকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়ছেন লগেনবাবু।

সপরিবারে চাষের খেতে লগেন রায়। — নিজস্ব চিত্র

সপরিবারে চাষের খেতে লগেন রায়। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৪
Share: Save:

অন্তত এক সপ্তাহ রোজ তিন ঘণ্টা করে মাঠে থাকতে কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে অনুরোধ করেছিলেন লগেন রায়। প্রথমে আপত্তি করলেও, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বিক্রম রাজি হন। এখন সকাল হলেই ছেলে-মেয়ে বউকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়ছেন লগেনবাবু। ধান কাটা হওয়ার পরে চলছে ঝাড়াই-মাড়াইয়ের কাজ। সঙ্গে রবিশস্যের জন্য মাঠ তৈরিও চলছে জোরকদমে।

নগদের অভাবে শ্রমিকদের মজুরি জোগাড় করতে না পেরে বাড়ির সকলকেই মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন শিলিগুড়ি লাগোয়া সাহুডাঙ্গির বাসিন্দা লগেনবাবু। আপাতত দুর্ভোগে পড়লেও, পরে লাভের আশায় রয়েছেন তিনি। তাঁর যুক্তি, ‘‘বাড়ির সকলে মিলে কাজ করায়, শ্রমিকের মজুরি তো বেঁচে যাচ্ছে।’’

গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের ঘোষণার পরে পাকা ধানের সোনা রঙ চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল লগেনবাবুর। মাঠে ন’বিঘে ধান পড়ে রয়েছে। অ্যাকাউন্টে টাকা পড়ে রয়েছে, বিধি নিষেধের জেরে তোলার উপায় নেই। ঘরে যে কিছু নগদ ছিল তাও পুরোনো পাঁচশো-হাজার বাতিলের জেরে ব্যাঙ্কে রাখতে হয়েছে। জমির ধান কাটতে অন্তত ৬ জন শ্রমিক চাই। একদিনে হবে না, ধান কাটতে অন্তত সপ্তাহখানেক লাগবে। তারপর ঝাড়াই-মাড়াই রয়েছে। শ্রমিক পিছু দু’শো থেকে তিনশো টাকা খরচ রয়েছে। নগদেই মজুরি দিতে হবে। এত নগদ মিলবে কোথা থেকে? তাই ধান মাঠেই পড়ে নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। আতান্তরে পড়ে কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী সকলকে ধান কাটার কাজে হাত লাগাতে রাজি করান তিনি। লগেনবাবুর ছেলে বিক্রম বলেন, ‘‘এর আগে কোনও দিন ধান কাটিনি। বাবা শিখিয়ে দিল। এমনটা না করলে তো বাড়িতে এ বার উপার্জনই বন্ধ থাকত।’’

ফাঁসিদেওয়ার বন্দরগছের দেবনাথ দম্পতি দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠেই বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। বিঘা পাঁচেক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন ললিতবাবু। ফি বছর শ্রমিকদের দিয়েই ধান কাটানোর কাজ হয়। এবারে মজুরি দেওয়ার মতো নগদ হাতে না থাকায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ধান কাটছেন। অঞ্জলিদেবী বলেন, ‘‘একা ওর পক্ষে তো গোটা জমির ধান কাটা সম্ভব নয়, তাই আমিও মাঠে এসেছি। ছেলেটার স্কুল বন্ধ। একা ঘরে রাখা যাবে না বলে ওকেও সঙ্গে আনি।’’ ধানের দাম পাওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে। হাটে ধান কিনতে মহাজনরা আসছেন বা বলে দাবি করলেন লগেনবাবু। তবে দাম মিলুক বা না মিলুক, মাঠে ধান ফেলে নষ্ট করতে রাজি নন কৃষকরা। তাই ধান বাঁচাতে পরিবারের সকলেই মাঠে নেমেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cultivation Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE