মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর ওয়াগন কারখানার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে কার্যত স্বীকার করে নিল রেলমন্ত্রক। তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষের ওই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে যে ক’টি ওয়াগন কারখানা রয়েছে তা ওয়াগনের চাহিদা মেটানো সক্ষম। তাই বুনিয়াদপুরের জন্য চলতি বাজেটে কোনও টাকা বরাদ্দ করা হয়নি।
দ্বিতীয় ইউপিএ আমলে রেলমন্ত্রী হয়ে মমতা যে ১৭টি বড় মাপের রেল কারখানা ঘোষণা করেছিলেন তার মধ্যে ছিল বুনিয়াদপুরের কারখানাটি। রেলমন্ত্রক জানিয়েছে ২০১০-১১ সালে ঘোষিত ওই প্রকল্পটি গড়ে তুলতে ১৩২.৮২ কোটি টাকা খরচ ধরেছিল রেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে ওই প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলায় ওই প্রকল্প নির্মাণে কোনও সংস্থা উৎসাহ দেখায়নি। ফলে বাজেট ঘোষণার পরের বছর থেকেই ওই প্রকল্পে বরাদ্দ ধার্য করেননি কোনও রেলমন্ত্রীই।
শিল্পহীন রাজ্যের একটি সীমান্ত জেলায় কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১২ সালের ৩০ অগস্ট বুনিয়াদপুরে ওই প্রকল্পটির শিলান্যাস করেছিলেন। সেই প্রকল্প বাতিল করে দেওয়ার খবরে এ দিন বুনিয়াদপুর সহ গোটা জেলা জুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রকল্পটি রূপায়ণের পিছনে দীর্ঘ দিন ধরে লেগে ছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। কারখানা বাতিলের খবরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শুধু এই জেলা নয়, এটা উত্তরবঙ্গের প্রতি রেলের বঞ্চনা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।’’
২০১২ সালের ৩০ অগস্ট রেল দফতর আয়োজিত বুনিয়াদপুরের ওই জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বুনিয়াদপুরের ওই ওয়াগন কারখানা তৈরির অনুমোদন দেন। ২০১২ সালের মার্চে বাজেটে অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছিল। বছরে এক হাজার ওয়াগন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্পটিতে প্রথম দফায় ১৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এরপর রেলমন্ত্রী বদল হয়। নানা কারণে প্রকল্পটি ঝুলে যায়।
জেলায় উন্নয়নের নিরিখে খুবই পিছিয়ে থাকা এলাকা বংশীহারী ও হরিরামপুর।
সেখানে ওই রেলের ওয়াগন তৈরির কারখানাকেই ‘পাখির চোখ’ করে প্রকল্পটির পেছনে লেগে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব মিত্র। শেষে সে সময়ে কাছের লোক মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই নড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট রেলের কর্তারা। বুনিয়াদপুরে রেলের নিজস্ব প্রায় ৩০ একর জমিতে সমীক্ষা করে ফ্যাক্টরি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। বিপ্লববাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা খুব চিন্তাভাবনা করেই জেলার গেটওয়ে বুনিয়াদপুরকে ওয়াগান শিল্পের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। এই কারখানায় যে সমস্ত দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন, তা এ জেলার আইটিআই এবং পলিটেকনিক কলেজের প্রশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া যেত। বুনিয়াদপুরের এই ওয়াগন তৈরির কারখানায় অন্তত ৮ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছিল বলে আক্ষেপ করেন তিনি। যা রেলের ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে চিরতরে বিলীন হয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy