Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রাণভয়ে ভোজালি নিয়ে শুতেন রীতা

বাড়ির সামনে এসে চিৎকার চেঁচামেচি, রাস্তায় কটূক্তির পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছিল। আতঙ্ক তাঁকে এতটাই গ্রাস করেছিল যে আত্মঘাতী স্কুলশিক্ষিকা মনে করতেন রাতে তাঁদের উপরে আক্রমণ হতে পারে।

ধৃতদের শাস্তির দাবি রীতাদেবীর ছাত্রীদের। — বিশ্বরূপ বসাক

ধৃতদের শাস্তির দাবি রীতাদেবীর ছাত্রীদের। — বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

বাড়ির সামনে এসে চিৎকার চেঁচামেচি, রাস্তায় কটূক্তির পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছিল। আতঙ্ক তাঁকে এতটাই গ্রাস করেছিল যে আত্মঘাতী স্কুলশিক্ষিকা মনে করতেন রাতে তাঁদের উপরে আক্রমণ হতে পারে।

এই আশঙ্কায় গত দুইমাস ধরে বিছানায় ধারাল অস্ত্র নিয়ে ঘুমোতেন রীতা সরকার। সোমবার সকালে মৃতার দাদা বিক্রম সরকার রীতার ঘরের খাটের তোশকের তলা থেকে ভোজালিটি উদ্ধার করেন।

মাস খানেক আগেই অবশ্য রীতার মা রেখাদেবী তা দেখে ফেলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আতঙ্কে চাকরি ছেড়ে চলে অন্য কোথাও চলে যাব বলত ও। একবার ওর কাছে ভোজালি দেখে আঁতকে উঠি। কেউ হামলা করতে আসলে কুপিয়ে দেবে বলেও বলত। বারণ করলেও শোনেনি।’’ মৃতার দাদা বিক্রমবাবু জানান, গত শুক্রবার তাঁর রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি আসার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘মাকে টেলিফোন করেছিলাম। তখন এমন পরিস্থিতি ছিল, বোনকে ভোজালি নিয়ে বাড়িতে থাকতে হয়েছে। একবারও এ সব বোন আমাকে বলল না। এই আক্ষেপ সারা জীবন থেকে যাবে।’’ শনিবার বিকেলে সিলিং ফ্যান থেকে রীতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর পরিবারের দাবি, মা ও মেয়ের সংসারকে এলাকা থেকে উৎখাত করে সাড়ে ৭ কাঠা জমিটি দখলের জন্যই সম্ভবত রীতাকে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ রীতাদেবীর বাড়িতে গিয়ে সিলিং ফ্যান ও ভোজালিটি নিয়ে এসেছে।

এ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। দুপুরে রীতার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে। তাঁরা শিক্ষিকার বাড়িতেও যান। পোস্টারে দোষীদের শাস্তির দাবি তুলে শক্তিগড় মাঠের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে। স্কুল, অভিযুক্তদের বাড়ি, রীতাদের বাড়ির সামনে হয়ে মিছিল শেষ হয়। কচিকাঁচা পড়ুয়ারা বলে, ‘‘দিদিমণির মৃত্যুর জন্য দোষীদের শাস্তি চাই। এর পরে তো আমাদের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি।’’

সকালে রীতার স্কুল, শক্তিগড় বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির বৈঠক হয়। শোক পালন করে স্কুলও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। মাধ্যমিকের সেন্টার পড়ায় আজ, মঙ্গলবার থেকে স্কুলও বন্ধ থাকবে। রীতা তাঁর সুইসাইড নোটে স্কুলের তিন পার্শ্বশিক্ষিকার নাম লিখে গিয়েছেন। তাঁরা তাঁকে ঈর্ষা করা ছাড়াও বাজে কথা রটাতেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘তদন্তে আমরা পুলিশকে সব রকমভাবে সাহায্য করব। ওই পার্শ্বশিক্ষিকাদের বক্তব্যও শোনা হচ্ছে। কারও সঙ্গে ঝগড়াও হয়নি। রীতা সুইসাইড নোটে সহকর্মীরা খুবই ভাল তাও বলে গিয়েছেন।’’ তবে রীতাদেবী মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে মিঠুন দাস ও সুবীর সাহার নাম লিখে গিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় রীতাদেবীর দেহ মেলার পরেই অবশ্য তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।

এ দিন দুপুরের মিছিলের পরে স্থানীয় মহিলা, তরুণীরা ফের শক্তিগড়ে বিক্ষোভ মিছিল বার করেন। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের স্থানীয় কাউন্সিলর দীপা বিশ্বাস। এলাকার ঘোরার পর এনজেপি থানায় গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। সেখানে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে মহিলারা স্লোগান দেন। পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে সঠিকভাবে যাতে তদন্ত এগোয় তা দেখতে বলেন। কাউন্সিলর দীপাদেবী বলেন, ‘‘কোনও মেয়েকে হেনস্থা বা কটূক্তি করার আগে দুইবার যাতে ভাবা হয়, সেই রকম দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার।’’

ঘটনায় ধৃত মিঠুন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই এলাকাবাসীরা চেনেন। ঘটনার দলের কর্মীর নাম জড়ানোতে অস্বস্তিতে দলের নেতারা। এ দিন দুপুরে রীতার বাড়িতে যান এনজেপি এলাকার তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ রায়। রীতার মা ও দাদার সঙ্গে কথা বলে পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। প্রসেনজিৎবাবু জানান, ‘‘দোষী কোন দলের বড় কথা নয়। তাদের কঠোর শাস্তি আমরাও চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Teacher Death Students Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE