Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পাত্তা নেই চিতাবাঘের

রাতের অন্ধকারে ঘণ্টা তিনেকের হাজিরা। কখনও উঁকি দিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা। মার্বেল সংস্থার গুদামের টিনের চালে বসে বনকর্মীদের তৎপরতা দেখে যেন বিরক্ত হয়ে দেওয়াল ধরে নেমে পড়েছিল নীচের ঝোপে। বুধবার রাত ১২টা। সেই শেষ দেখা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে ঘণ্টা তিনেকের হাজিরা। কখনও উঁকি দিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা। মার্বেল সংস্থার গুদামের টিনের চালে বসে বনকর্মীদের তৎপরতা দেখে যেন বিরক্ত হয়ে দেওয়াল ধরে নেমে পড়েছিল নীচের ঝোপে। বুধবার রাত ১২টা। সেই শেষ দেখা।

শিলিগুড়ির সেবক রোডের দুই মাইলের ওই গুদামে বৃহস্পতিবার ভোর অবধি তল্লাশি চালিয়েও দেখা মেলেনি চিতাবাঘটির। হাল ছাড়েননি বনকর্মীরা। দিনের বেলায় দফায় দফায় চলে তল্লাশি। কখনও ছাগল টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা হয়, কখনও বা পটকা ফাটিয়ে ঝোপঝাড়ে বন্দুক হাতে ঘুরে বেড়ান বনকর্মী অফিসারেরা। কিন্তু তার খোঁজ নেই।

এলাকায় আতঙ্ক বাড়তে থাকায় রাতে আরেক দফায় তল্লাশি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন অফিসারেরা। তার পরেও পাওয়া যায়নি কোনও সূত্র। খাঁচার ধারেকাছে আসেনি বুনোটি। রাতে বন দফতরের বৈকুণ্ঠপুরের ডিএফও উমারানি এন বলেন, ‘‘চিতাবাঘটি মনে হচ্ছে এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হওয়া কারণ নেই। আমরা বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি রাখছি।’’

খোঁজ: এই চাল টপকেই পালিয়েছে চিতাবাঘ। তার খোঁজে বনকর্মীরা। সঙ্গে ঘুমপাড়ানি গুলি-বন্দুক। বৃহস্পতিবার সেবক রোডে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিন্তু রাতের শহরে আসা চিতাবাঘটি গেল কোথায়? বনকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গুদামটির পিছন দিয়ে মেরেকেটে এক কিলোমিটারের মধ্যে বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল। ডানপাশে একই ভাবে দু’কিলোমিটারের মধ্যে মহানন্দা অভয়ারণ্য। তেমনিই, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের আর এক পাশ ধরে গেলে গুলমা, মিলনমোড় হয়ে সুকনার জঙ্গল। রাতভর গাড়ি চলাচল করায় জাতীয় সড়ক পারাপারের সম্ভাবনা কম। তাই রাতের অন্ধকারে চিতাবাঘটি কোনও ভাবে বৈকুন্ঠপুর বা মহানন্দার জঙ্গলের দিকে পালিয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: চিতাবাঘ কি জঙ্গলে ফিরেছে? আতঙ্ক কাটছে না

সেবক রোডের গুদামটির পাশে দুই বিঘা জমি রয়েছে। তাতে পুরনো বাড়িঘর, গুদাম এবং জঙ্গল রয়েছে। লোকজন কমই যাতায়াত করেন। এক সময় পরিবহণ সংস্থার অফিসও ছিল। বন অফিসারদের কথায়, এলাকাটি চিতাবাঘের পক্ষে একেবারে আদর্শ। কোনও ভাবে জঙ্গল থেকে সেটি এখানে চলে এসেছিল। পরে রাস্তার লোকজন, শপিং মলের সামনে গাড়ির আওয়াজ পেয়ে ভয়ে ছাদে উঠে বসেছিল।

চিতাবাঘের চব্বিশ ঘণ্টা

বুধবার

সন্ধ্যা ৬টা: আড়াই মাইলের শপিং মলের সামনে এক ঝলক চিতাবাঘের।

রাত ৮টা: গুদামের ছাদে ফের দর্শন। এলাকায় আতঙ্ক।

রাত ৯টা: ১৪৪ ধারা জারি করে ময়দানে বনকর্মীরা।

রাত ১১টা: টিনের চালে, গাছের ডালে বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি।

রাত ১২টা: গাছের পাশে জিরিয়ে দেওয়াল বেয়ে ঝোপে গা ঢাকা।

ভোর ৩টা: আর দেখা নেই চিতাবাঘের। তল্লাশি স্থগিত।

বৃহস্পতিবার

সকাল ৭টা: নতুন করে তল্লাশি শুরু গুদাম এবং লাগোয়ো ঝোপঝাড়ে।

সকাল ৯টা: ছাগল টোপ দিয়ে বসানো হল খাঁচা।

সকাল ১১টা: পটকা ফাটিয়ে, ঝোপ জঙ্গলে তল্লাশি।

বেলা ২টা: তিন রেঞ্জের বনকর্মীদের চিরুণি তল্লাশি।

সন্ধ্যা ৭টা: সেবক রোডের গুদাম ও লাগোয়া এলাকার ফের তল্লাশি।

রাত ৮টা: প্রায় এক কিমি জুড়ে খোঁজ। দেখা নেই চিতাবাঘের।

খাবারের অভাবে কাউকে আক্রমণ করে ফেলতে পারে ভেবেই, সাতসকালে ছাগল-সহ খাঁচা বসিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বুনোটি আর এলাকার থাকার সাহস দেখাতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে।

এর আগে ২০১১ সালে লিম্বুবস্তিতে একই ভাবে জনবহুল এলাকায় চলে আসে চিতাবাঘ। সেটিকে ধরতে গিয়ে দু’জন বনকর্মী জখম হতেই গুলি করে মারা হয় চিতাবাঘটিকে।

এর পরে ২০১৫ সালে শহরের হাকিমপাড়ার একটি কাঠের বাড়িতে ঢুকে বসেছিল চিতাবাঘ। পরে সেটিকে ধরে জঙ্গলে ছাড়া হয়। কিন্তু এ বার চিতাবাঘটি কোথা থেকে লোকালয়ে এল, কোথায় গেল তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard panic Siliguri Forest Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE