Advertisement
১১ মে ২০২৪

দশরথ-বচ্চনদের দিন কাটছে পাড়ে, প্রতীক্ষা নৌকোর

কে-ই বা জানত, বাড়ি ফেরা বেমালুম অনিশ্চিত হয়ে যাবে! কেউ চাষের বা ব্যবসার কাজে, কেউ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নদীর অন্য পাড়ে গিয়েছিলেন। নদীতে জল বাড়ায় দুই পাড়ে আটকে পড়েন তাঁরা। স্থানীয় স্কুল গুলিই তখন হয়ে ওঠে তাঁদের আশ্রয়স্থল।

নৌকোর দাবি। সাঁইথিয়ার গ্রামে।

নৌকোর দাবি। সাঁইথিয়ার গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৬
Share: Save:

কে-ই বা জানত, বাড়ি ফেরা বেমালুম অনিশ্চিত হয়ে যাবে!

কেউ চাষের বা ব্যবসার কাজে, কেউ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নদীর অন্য পাড়ে গিয়েছিলেন। নদীতে জল বাড়ায় দুই পাড়ে আটকে পড়েন তাঁরা। স্থানীয় স্কুল গুলিই তখন হয়ে ওঠে তাঁদের আশ্রয়স্থল। এমন দৃশ্য নতুন নয়, ময়ূরাক্ষী ও কানা দু’পাড়ের গ্রামগুলির কাছে। শুক্রবার বেলা এগারোটা নাগাদ হঠাৎ করে তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে প্রচুর জল ছাড়ায় ঠিক সেই রকমই আটকে পড়েন ময়ূরাক্ষীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের জুনিদপুর, ইটেগড়িয়া, রোঙ্গাইপুর, পাইসর-সহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ। এখনও তাঁরা ঘরছাড়া।

এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সোমনাথ সাধু বলেন, ‘‘আটকে পড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওঁদের থাকার জন্য স্থানীয় স্কুলে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং শুকনো খাবারও দেওয়া হয়েছে। আসলে সময় মতো বাড়ি ফিরতে না পাড়ায় মানসিক যন্ত্রনায় অনেকেই ছড়িয়ে ছিটেয়ে নিজেদের মতো করে আছেন। সে জন্য খাবার পাওয়া না পাওয়া নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। অন্য একটি সমস্যা হল আমাদের ব্লকে নৌকো না থাকা। জেলা শাসককে বলে লাভপুরের মিরিটি থেকে একটা নৌকোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি বিকেল পর্যন্ত নৌকো ও মাঝি গোবিন্দপুর পৌঁছে যাবে।’’

ময়ূরাক্ষী নদীর উত্তর ও কানা নদীর দক্ষিণ পাড়ে যে ১১টি গ্রাম আছে সে সব গ্রামের কয়েকটি হল বড়াম, ঘাষবেড়া, গোবিন্দপুর, কুলতোড়। গোবিন্দপুরের বচ্চন বাউড়ি ও তাঁর স্ত্রী লিপিকাদেবী, মিঠুন বাউড়ি ও তাঁর স্ত্রী পূজাদেবী, দশরথ বাউড়ি ও তাঁর স্ত্রী পম্পাদেবী, সুমিত্রা টুডু, মঙ্গলি মুর্মু, কুলতোড়ের গীতা বাউড়ি, লিচু বাউড়িরা জানান, এক দেড় বছরের শিশুকে শাশুড়ি ননদদের কাছে রেখে, এপাড়ে কাজে চলে আসি। বেলা এগারোটা হবে, খবর পাই জল বাড়ছে। কাজ ফেলে দৌড়। কিন্তু ফিরব কিসে। নৌকোও নাই। ছেলেমেয়েদের জন্য ছটফট করছি।’’

স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তেমন একজন, বচ্চন বাউড়ি। হাতের ওষুধ দেখিয়ে বলেন, ‘‘মেয়েটার খুব জ্বর। ওষুধ কিনেছি। ভেবেছিলাম এ পাড়ে দিনমজুরের কাজ করে একেবারে ওষুধ নিয়ে ফিরব। ওষুধ হাতে নিয়ে নদীর পাড় থেকে আর নড়িনি। যদি কোনভাবে পারি এই আশায়। কিন্ত ফেরা হল কই!’’

কাজে এসে আটকে পড়া বড়াম গ্রামের শেখ কায়ের, ঘাষবেড়ার ইলেক্ট্রনিক্স মিস্ত্রী শেখ মেহেরুদ্দিনের অবস্থাও একই রকম। তাঁরা বলেন, ‘‘যে ভাবে জল বাড়ছে তাতে গ্রামের পরিবার ও লোকজনের জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। শুনছি নৌকোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু কখন নৌকো আসবে কে জানে!’’

কার্যত নৌকোর অপেক্ষায় দিন কাটছে শেখ কায়ের, গীতা বাউড়িদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ও পাড়ের আটকে পড়া লোকজনদের জুনিদপুর ও পাইসর প্রাইমারি স্কুলে রাখা ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। সাঁইথিয়ার বিডিও অতুনু ঝুরি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ব্লকের কোন গ্রামে নদীর জল ঢোকেনি। কোনও ত্রান শিবিরও খোলা হয়নি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE