Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শ্যামের গড়ে রাহুলের সভা, ভাঙন তৃণমূলে

বীরভূমে ভাঙন চলছেই। এ বার রাঢ়বঙ্গে তাদের আর এক শক্ত ঘাঁটি বাঁকুড়াতেও কি ভাঙছে তৃণমূল? বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া মড়ার গ্রামে বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সভার পরে এমনই দাবি করছেন বাঁকুড়া জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সংখ্যালঘু প্রভাবিত ওই গ্রামে রাহুলের সভায় এ দিন চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছে। ওই সভাতেই যুব তৃণমূলের একাধিক স্থানীয় নেতা যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। মড়ার গ্রামটি বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যে কেন্দ্রের বিধায়ক খোদ রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতটিও তৃণমূলের দখলে।

রাহুল সিংহকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন এক বিজেপি কর্মী। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

রাহুল সিংহকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন এক বিজেপি কর্মী। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

বীরভূমে ভাঙন চলছেই। এ বার রাঢ়বঙ্গে তাদের আর এক শক্ত ঘাঁটি বাঁকুড়াতেও কি ভাঙছে তৃণমূল?

বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া মড়ার গ্রামে বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সভার পরে এমনই দাবি করছেন বাঁকুড়া জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সংখ্যালঘু প্রভাবিত ওই গ্রামে রাহুলের সভায় এ দিন চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছে। ওই সভাতেই যুব তৃণমূলের একাধিক স্থানীয় নেতা যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। মড়ার গ্রামটি বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যে কেন্দ্রের বিধায়ক খোদ রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতটিও তৃণমূলের দখলে।

পরে রাহুল বলেন, “বিজেপি-কে যে আর সাম্প্রদায়িক বা মুসলিম-বিরোধী দল হিসাবে একঘরে করে রাখা যাবে না, গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ঘটনায় তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল। এ দিন মড়ার পঞ্চায়েত এলাকায় বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে তাঁদের অনেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, তাতে আগামী দিনে ওই দলে আরও ভাঙন ধরবে।”

ইতিমধ্যেই পাড়ুই-সহ বীরভূম জেলার একাধিক অঞ্চলে বহু সংখ্যালঘু মানুষ বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের পরে ওই জেলায় আরও বেশি করে তৃণমূলে ভাঙন ধরিয়েছে বিজেপি। কিন্তু সেখানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মতো বিতর্কিত চরিত্র বা তাঁদের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ লোকের অভাব নেই। কিন্তু বাঁকুড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার ব্যাখ্যা কী?

তৃণমূলের একাধিক জেলা-নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, সংখ্যালঘুদের বিজেপি-মুখী হওয়ার কারণের অভাব নেই বাঁকুড়াতেও। ২০১১-র বিধানসভা এবং ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের পরে জেলায় একচ্ছত্র ভাবে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে শাসক দল। কিন্তু তার পর থেকে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই দলবাজির ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অনেক ক্ষেত্রে থমকে গিয়েছে উন্নয়ন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ এবং বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর অনুগামীরা যদি এক দিকে থাকেন, তবে শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠেরা অন্য দিকে। দক্ষিণ বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকারের সঙ্গীদের আবার দলে আলাদা অবস্থান রয়েছে। এই গোষ্ঠী রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ অনেকে।


বিজেপি-তে যোগ। মড়ার গ্রামে।

জেলার রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, লোকসভা ভোটে দীর্ঘদিনের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার হারের পর থেকে বাঁকুড়ায় সিপিএমের অস্তিত্ব তেমন করে চোখে পড়ছে না। ফলে, জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গত কয়েক বছরে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের দাপটে যাঁরা শঙ্কিত, তাঁদের কেন্দ্রের শাসক দলের ‘ছাতা’র তলায় আশ্রয় খোঁজায় উৎসাহ দেখানো ছাড়া উপায় নেই। তাঁদের মধ্যে সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন।

তা ছাড়া, লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতো বাঁকুড়াতেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিজেপি। দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের এখন নিয়মিত সভা-মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে। জেলার নেতা সুভাষ সরকার বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি। বিজেপি-র প্রতি আস্থা রাখার সেটাও একটা কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আগামী ৩০ নভেম্বর কলকাতায় বিজেপি-র প্রস্তাবিত ‘উত্থান সভায়’ যোগদানের আহ্বান জানিয়ে এ দিন মড়ারে সভার অয়োজন করেছিল দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটি। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ওই সভায় ভিড় হয়েছিল প্রায় চার হাজার মানুষের। গ্রামের সভায় ভিড়ের বহর দেখে উজ্জীবিত জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। বিষ্ণুপুরের বিজেপি নেতা স্বপন ঘোষ বলেন, “অভাবনীয় সাড়া পেলাম। আমরা যে এগোচ্ছি, তা তৃণমূল দেখুক।”

ওই সভামঞ্চেই এ দিন বিজেপি-তে যোগ দেন মড়ার অঞ্চল যুব তৃণমূল কমিটির কার্যকরী সভাপতি পথিক সাইনি, সহ-সম্পাদক মোক্তার দালাল, ওই কমিটির সদস্য গিয়াসুদ্দিন দালাল এবং বেশ কয়েক জন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। এ ছাড়াও মঞ্চে উঠে তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন স্থানীয় রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বনাথ বাউল। তাঁরা দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে বলেন, “অনেক আশা নিয়ে তৃণমূলে এসেছিলাম। কিন্তু, দলটা চোরে ভরে গেছে! আর থাকা যায় না। তাই বিজেপি-তে এলাম।”

মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অবশ্য এই সভা তথা দল ছাড়ার ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর মন্তব্য, “যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের জন্য দলের কোনও ক্ষতি হবে না। আমরা সভা করলে এর চার গুণ লোক হয়। এই সভা নিয়ে আমরা ভাবিত নই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP bankura rahul sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE