Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আদর্শ গ্রাম বেছে কাজে প্রশাসন

প্রথম দফায় ব্লকগুলিকে কোন গ্রামকে তারা আর্দশ গ্রাম হিসাবে তৈরি করতে চাইছে, তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১২
Share: Save:

গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়ন। সেই সঙ্গে গ্রামের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। এই দুই লক্ষ্যপূরণে রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’য় ব্লকের ছ’টি গ্রামকে আর্দশ গ্রাম (মডেল ভিলেজ) হিসাবে তৈরি করতে চাইছে প্রশাসন। কৃষি, উদ্যানপালন, পশুপালনের মতো বিভিন্ন দফতরকে এক সঙ্গে নিয়ে এই প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

প্রথম দফায় ব্লকগুলিকে কোন গ্রামকে তারা আর্দশ গ্রাম হিসাবে তৈরি করতে চাইছে, তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল। সেই কাজ শেষ হওয়ার পরে গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে বিশদে পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে কিছু প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছে। কিছু কাজ শুরুও হয়েছে।

প্রশাসন জানিয়েছে, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের চোরহাপাড়ি পঞ্চায়েতের সিজা, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি পঞ্চায়েতের প্রতাপপুর, নিতুড়িয়া ব্লকের জনার্দন্ডি পঞ্চায়েতের মহারাজনগর, সাঁতুড়ি ব্লকের গড়শিকা পঞ্চায়েতের কালীপাহাড়ি, কাশীপুর ব্লকের আগরডি-চিত্রা পঞ্চায়েতের চিত্রা ও পাড়া ব্লকের ঝাপড়া-জবড়রা ১ পঞ্চায়েতের জবড়রাকে আর্দশ গ্রাম হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে। এই ছ’টি গ্রামই আদিবাসী অধ্যুষিত। প্রশাসন মূলত এমন গ্রামগুলিরই সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে চাইছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি কোনও নির্দেশিকার ভিত্তিতে নয়, ছ’টি ব্লকের ছ’টি গ্রামকে আর্দশ গ্রাম হিসাবে তৈরি করার পরিকল্পনাটা নেওয়ার পিছনে রয়েছে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়ের ভাবনা। কয়েক মাস আগেই এই পরিকল্পনা নিয়ে বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে কী ভাবে এই প্রকল্প রূপায়িত হবে, তার রূপরেখা তৈরি করেন এসডিও।

স্থির হয়েছে, চতুর্দশ অর্থ কমিশন ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অর্থে গ্রামগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো হবে। পাশাপাশি একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গ্রামের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে বড়মাপের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি, উদ্যানপালন, পশুপালন, আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের সাহায্যে গ্রামের বাসিন্দা বিশেষত মহিলাদের আর্থিক দিক দিয়ে সাবলম্বী করতে চাইছে প্রশাসন। মহকুমাশাসক দেবময়বাবুর কথায়, ‘‘বিভিন্ন দফতরকে সঙ্গে নিয়ে ছ’টি গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক মানের উন্নয়ন যেমন করতে চাইছি আমরা, তেমনিই গ্রামগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নও করা হবে।”

কী করা হবে এই আর্দশ গ্রাম প্রকল্পে? প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা করা হবে। ওই দফতর থেকে প্রাপ্ত টাকায় সৌর বিদ্যুৎ চালিত পথবাতি লাগানো হবে গ্রামে। সৌর বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সঙ্গে টিউবওয়েল বসিয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি ব্লক এই মর্মে প্রকল্প তৈরি করে জেলায় পাঠিয়েছে। গ্রামের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশাসন চাইছে, এই প্রকল্পে গ্রামের বাসিন্দা বিশেষ করে মহিলাদের সাবলম্বী করতে।

দেবময়বাবু বলেন, ‘‘রাস্তা, বিদ্যুৎ ও জলের ব্যবস্থা করলেই কোনও গ্রাম আর্দশ হয় না। তাই আমরা গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক দিক দিয়ে আরও সাবলম্বী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।” আর এই ক্ষেত্রে প্রশাসন পাশে পেয়েছে কৃষি, উদ্যানপালন ও পশুপালনের মতো দফতরগুলিকে।

ছ’টি গ্রামেই জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করতে চাইছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে নিতুড়িয়ার মহারাজনগরে জৈব পদ্ধতিতে ধান ও মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সিজা গ্রামেও জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরুর কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই ছ’টি গ্রামের পুরুষদের নিয়ে দল গঠন করে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করানো হবে। একই সঙ্গে উদ্যানপালন দফতরের সাহায্যে আনাজ, ফুল ও ফলের চাষ করানো হবে। মুরগির খামার, ছাগল প্রতিপালনের প্রকল্প গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নিয়ে করবে পশুপালন দফতর।

অন্যদিকে, স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতর এবং আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে মহিলারা যে ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে চাইবেন, সেটাই তাঁদের দেওয়া হবে। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা উপর থেকে প্রশিক্ষণের বিষয়টি চাপিয়ে দিচ্ছি না। মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁরা যে ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, সেটাই বাছা হচ্ছে।” বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা ইতিমধ্যেই মহিলাদের সঙ্গে গিয়ে প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া জানান, চিত্রা গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর দলগুলি ধূপকাঠি, মোমবাতি তৈরির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিডিও (রঘুনাথপুর ২) সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রতাপপুর গ্রামের মহিলাদের সাথে কথা বলার পরে দেখা গিয়েছে তাঁরা বেতের ঝুড়ি, বাশেঁর হাতের কাজ শেখার বিষয়ে আগ্রহী।

আর্দশ গ্রামের এই প্রকল্প অনেকটাই গতি পেয়েছে বলে দাবি করছে মহকুমা প্রশাসন। কাশীপুরের চিত্রা গ্রামে ইতিমধ্যেই বেদানার বাগান তৈরি করে গ্রামের কিছু বাসিন্দার কর্মসংস্থান করা হয়েছে। এ বার আলফানসো আমের চাষ সেখানে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান সভাপতি সৌমেনবাবু। একই ভাবে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের প্রতাপপুর গ্রামের পাশেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ছাই ইঁটের কারখানা করা হয়েছে।

মহকুমাশাসকের দাবি, ‘‘গ্রামগুলির উন্নয়নে প্রকল্প তৈরি করে জেলায় পাঠানো হয়েছে। সমান্তরাল ভাবে বেশ কিছু কাজ শুরুও হয়েছে। দেবময়বাবু বলেন, ‘‘ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সমস্ত ব্লককে বিশদে সমস্ত প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্পগুলির রূপায়ণ করতে চাইছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ideal village Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE